বাঘায় পদ্মার চরে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন

আমানুল হক আমান:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। পেঁয়াজ তুলতে ব্যস্ত চাষিরা। পেঁয়াজ উত্তোলন ও বাজারজাত করতে শত শত শ্রমিক কাজ করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে কম জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে দুই হাজার ২৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছিল সাত হাজার ৬৫০ হেক্টর। চকরাজাপুর চরের আমিন সিকদার জানান, চলতি মৌসুমে যারা পেঁয়াজ আবাদ করেছে ইতোমধ্যে তারা বিক্রি করতে শুরু করেছে। এবছর ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ হয়েছে এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে দেড় বিঘা জমির আগাম জাতের পেঁয়াজ উঠান হয়েছে। দাম ভাল পেয়েছি।

পলাশি ফতেপুর চরের এনাত হোসেন (৬৫) জানান, বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায়। কিন্তু প্রতি মণ পেঁয়াজের গড় উৎপাদন খরচ হয়েছে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা। তারপরও খরচ বাদ দিয়ে উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি করে মনপ্রতি এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা ঘরে আসছে।

টিকটিকিপাড়া চরের আঞ্জু মোল্লা জানান, পেঁয়াজের যে দাম আছে সেটা না থাকলে পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে চাষিদের। কারন অন্যান্য দ্রব্যে ও সার কিটনাশক ঔষুধের দাম আগের চেয়ে বেশি হয়েছে।

পলাশি ফতেপুর চরের মহিলা শ্রমিক জয়গন বেগম, পারভীন আক্তার, নাসিমা বেগম জানান, চলতি মৌসুমে আগাম জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন করে চরের অধিকাংশ চাষিরা লাভবান হয়েছেন। পাশাপাশি আমরা কাজ করে টাকা রোজগার করে সংসার চালাতে সুবিধা হচ্ছে। আগাম জাতের পেঁয়াজে চাষে শ্রমিকরা কাজ করে সাথে সাথে মুজুরি পেয়ে খুশি।

চকরাজাপুর চরের পেঁয়াজ চাষি বাবলু দেওয়ান জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবছর ১৬ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এবার বম্পার ফলন হয়েছে।

গড়গড়ি ইউনিয়নের চরের স্থানীয় সাবেক মেম্বার রেজাউল করিম জানান, গত বছর পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে এবছর অনেকে পেঁয়াজ চাষ কমে দিয়েছে। গত বারের কথা না ভেবে এবার যারা বেশি করে পেঁয়াজ চাষ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

বাঘা হাটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নজমুল হোসেন জানান, মোকামে পেঁয়াজের যথেষ্ঠ চাহিদা আছে। স্থানীয় বাজারে পাইকারী ক্রেতার সংখ্যা কম। পেঁয়াজ নিয়ে কৃষকদের কোন চিন্তা নেই। সরকার যদি এলছি ও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করে তাহলে চাহিদা ও দাম থাকবে।

আড়ানী হাটের ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন জানান, ঢ্যামনা ও চারা পেঁয়াজ নামে দুই ধরনের পেঁয়াজ এলাকায় চাষ হয়ে থাকে। চারা পেঁয়াজের দীর্ঘ সময় মৌজুদ রাখা যায়। এই পেঁয়াজ বেশি আবাদ হয় উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে। এই ধরনের পেঁয়াজের বাজার থাকলে আগামীতে উৎপাদনে মনোযোগী হবেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম সিল্কসিটি নিউজকে জানান, উপজেলা সর্বত্র কম বেশি পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। উপজেলার দুটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে যে পরিমান পেঁয়াজ চাষ হয়েছে তার চেয়ে বেশি চাষ হয়েছে শুধু পদ্মার চরাঞ্চলে। গত বছরের চেয়ে এবছর ভাল দাম পাচ্ছে কৃষকরা।

স/শ