বাঘায় জরাজীর্ণ বাড়িতে দুই শহীদ পরিবার: বছরে একবার ফুল দিতে আসে শিক্ষার্থীরা

আমানুল হক আমান, বাঘা:
রাজশাহীর বাঘায় জরাজীর্ণ বাড়িতে থাকেন দুই শহীদ পরিবার। কেউ মনে করে না এই দুই পরিবারের উত্তর সূরিদের কথা। বিজয়ের মাস এলেই শ্রদ্ধা, ফুল আর গানে গানে যেভাবে শহীদদের স্মরন করা হয়, অন্য মাসে কিছুই মনে করেনা কেই তাদের পরিবারের কথা।

উপজেলার আড়ানী পৌরসভার দশআনি ঋষিপাড়া মহল্লার শহীদ রাশ চেীধুরী ও প্রবাস দাসের স্ত্রী, ছেলে এবং তাদের উত্তর সূরীদের কথা। ৪৬ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে এ যাবত পর্যন্ত কোন সহযোগীতার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। সরকারের চালু হওয়া মাসিক ভাতার টাকাও পায়নি। এমনিভাবে এই দুই পরিবারের উত্তরসূরিকে কোন সহযোগীতা করা হয়নি।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলার দশআনি ঋষিপাড়া মহল্লার শহীদ রাশ চেীধুরীর একটি আধাপাকা ঘর ও তিনটি কাঁচা ঘরের দেয়াল খসে পড়ছে। এই বাড়িতে থাকেন শহীদ রাশ চেীধুরীর বড় ছেলে রতন চেীধুরী (৫২), স্ত্রী পলি চেীধুরী (৪৫), ছেলে রানা (১৯), অর্ক (৯), মেজো ছেলে জীবন চেীধুরী (৪৫), স্ত্রী মাধুরি চেীধুরি (৪০), একমত্র মেয়ে মন্দিরা (১১), ছোট ছেলে স্বপন চেীধুরী (৪২), স্ত্রী রিতা চেীধুরি (৩৫), এক ছেলে রিক (১০)। কোন সরকারই এই বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়নি। বিজয় ও ভাষার মাস এলেই শহীদ পরিবারের কথা পত্রিকার পাতায় পড়ে মনে পড়ে। বাঁকি মাসগুলোতে মনে করে না এমন মন্তব্য করেন শহীদ রাশ চেীধুররি বড় ছেলে রতন চেীধুরী ।

অপর দিকে একই মহল্লার শহীদ প্রবাস দাসের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, দুইটি ছোট ছোট টিনের ছাপড়া ঘর, একটি ঘরে থাকেন শহীদ প্রবাস দাসের স্ত্রী গীতা দাস।

অপর ঘরে থাকেন তার ছেলে সুনীল দাস। ঘরের অবস্থা ভাল না। খড়ের বেড়াগুলো ভেংগে গেছে। এই বাড়িতে থাকেন শহীদ প্রবাস দাসের স্ত্রী গীতা দাস (৬৩), ছেলে সুনীল দাস (৩৯), স্ত্রী মুক্তি দাস (৩৫), দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে দিপ্তি (১৭), বিক্রম (১৮), বিথি (৯)। প্রবাস দাসের বড় ছেলে অনিল দাস (৪৬), আট বছর পূর্বে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। তার স্ত্রী বাসনা দাস (৪২), দুই ছেলে অর্নব (১৯), ও সনদ (১৫) কে নিয়ে মানুষের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে খেয়ে না খেয়ে কোন রকম দিন পার করছে।

গীতা দাস জানান, বছরে একবার স্থানীয়ভাবে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমার এই বাড়িতে ফুল দেয়ার জন্য আসে। অন্য কোন সময় খোঁজ খবর নেয় না কেউ।

শহীদ রাশ চেীধুররি বড় ছেলে রতন চেীধুরী জানান, সরকার প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে প্রতি মাসে ভাতা চালু করেন। কিন্তু আমাদের পরিবারকে কিছুই দেয়া হয়নি।

১৯৭১ সালে ৩০ মার্চ রাশ চৌধুরি, অপর দিকে প্রবাস দাস ১৯৭১ সালে ১৫ এপ্রিল শহীদ হন পাকহানাদার বাহিনীর হাতে।

স/অ