বাঘায় কিশোরীদের পালিয়ে বিয়ে করার প্রবণতা বাড়ছে

বাঘা প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাঘায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা যতটুকু না বেড়েছে তার চেয়ে অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পালিয়ে বিয়ে করার হার। গত এক মাসের ব্যবধানে উপজেলার ১১জন কিশোরী পালিয়ে বিয়ে করেছে। এ দিক থেকে থানা পুলিশের মাধ্যমে সহায়তা পায়নি কোন পরিবার। দুয়েকজন অবিভাবক অপহরণ মামলা দায়ের করলেও তা রেকর্ড করা হয়নি। পুলিশের সাজানো কথায় নিখোঁজ হিসেবে (জিডি) করানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাঘায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাধ্যমিকের গ-ি না পেরুতেই দারিদ্রতা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের ভালবাসা সম্পর্কের অজুহাতে অনেক অবিভাবক তাঁর ছেলে মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন। আবার অনেকেই বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁর ছেলে-মেয়েরা পছন্দের কারো সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে। কিন্তু এ বিয়ের আইনি সহায়তা পাচ্ছে না কোন মেয়ের পরিবার।

রাষ্ট্রীয় আইনে ১৮ বছর পর্যন্ত ছেলে মেয়েদের সিদ্ধান্তের মুল্য নেই বলা হলেও মেয়ের বাবার অভিযোগ আমলে নিচ্ছেনা পুলিশ। এমনটি অভিযোগ করেন ভুক্তভুগী, চেয়ারম্যান, মেম্বর ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা।

উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকরুল হাসান বাবলু অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ দিন পুর্বে তাঁর ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়েকে স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে মাইক্রো যোগে অপহরণ করে প্রতিবেশী যুবক সেলিম আহম্মেদ ও তার বন্ধু রাজিব হোসেন। এ ঘটনায় মেয়ের বাবা বাঘা থানায় একটি আভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। কিংবা উদ্ধারও করতে পারেনি সেই মেয়েকে।

অপরদিকে বাজুবাঘা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ফজলুল হক অভিযোগ করে বলেন, গত ১ জুলাই তাঁর এলাকার দশম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় ফাঁকা রাস্তায় একা পেয়ে অপহরণ করে একই গ্রামের ও রাজশাহী পলিটেকনিক্যাল ইনিস্টিটিউটের ছাত্র মাকতুম হাসান। এ বিষয়ে মেয়ের পরিবার থেকে থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও সেটা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। পরে র‌্যাবের সহযোগিতার ছেলের বাবাকে চাপ দিয়ে অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে ওই ছাত্রী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি রয়েছে বলেও তিনি উল্যেখ করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার উপজেলার-চাকরাজাপুর, চন্ডিপুর, মীরগঞ্জ ও হেলালপুর উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে জানা গেছে, গত এক বছরে এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের কারণে ঝড়ে পড়েছে। এর মধ্যে হেলালপুর এম.এইচ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে ২৫ শিক্ষার্থী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাঘায় মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের গোপনে যতটা না বাল্য বিয়ে হয় তার চেয়েও বেশি সংখ্যা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা।

উপজেলার সীমান্তবর্তী পদ্মার চরের চকরাজাপুর ও পলাশী ফতেপুর উচ্চবিদ্যালয় এবং হেলালপুর এম.এইচ বালিকা, তেঁথুলিয়া বালিকা, রহমতুল¬া বালিক বিদ্যালয়, ইসলামী একাডেমী উচ্চ বিদালয় ও আলাইপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বাল্য বিয়ে রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

এ বিষয়ে হেলালপুর এম.এইচ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গত এক বছরে সপ্তম থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত মোট ২৫ শিক্ষর্থীর বাল্য বিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনি চেষ্টা চালিয়ে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দু’টি বিয়ে বন্ধ করেছেন। অবশিষ্ট বিয়েগুলো তার অজান্তে গোপনে হয়েছে। এর মধ্যে সপ্তম শ্রেনীর শিক্ষার্থী রয়েছে ৮ জন।

অপর দিকে পদ্মার চরাঞ্চলের শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরেও গোপনে বাল্য বিয়ে রোধ করা যাচ্ছে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত এক বছরে পদ্মার চরাঞ্চলের দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে হয়েছে।

বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল হানান বলেন, উপজেলায় বাল্য বিয়ের চেয়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পালিয়ে বিয়ের প্রবনতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি এ সব বিষয়ে পরিবারের দায়ের কথা অপহরণ মামলা রেকর্ড না করলেও মেয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা জানান, পালিয়ে বিয়ে করার বিষয়টি ভিন্ন। বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারী সংগঠন, এনজিওকে কার্যকরী ভুমিকা রাখতে হবে।

স/বি