বাঘায় একই পরিবারের তিন সন্তান প্রতিবন্ধী

বাঘা প্রতিনিধি  : রাজশাহীর বাঘায় আবদুর রাজ্জাক নামের এক কৃষকের তিন সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় মানবেতর জীবন যাবন করছেন। প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে পরিবার চরম দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছেন।

জানা যায়, বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দিয়ারপাড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক ৩৫ বছর আগে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের ঘরে এক এক করে ৩টি ছেলে সন্তানের জন্ম নেয়। ৩টিই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে কেউ উঠে দাঁড়াতে পারেনা।

তবে অর্থের বিনিময়ে মেজো সন্তান মিলন প্রামানিকের চিকিৎসা করাতে না পেরে কয়েক বছর আগে মারা গেছে। বড় সন্তান লিটন প্রামানিক (৩০) ও ছোট সন্তান মেহেদি হাসান রাফি (১২) মৃত্যুর প্রহর গুনছে। একই পরিবারের ৩টি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে সন্তান জন্ম নেয়ায় সমাজে তারা অন্যান্য ছেলে-মেয়ের মতো চলতে পারে না, মিশতে পারে না। সব সময় বাড়িতে থেকে সময় কাটাতে হয় তাদের।

এদিকে সংসারের ৪ জনের মুখে অন্ন তুলে দিতে অসহায় বাবাকে মাঠে কৃষি কাজ করতে হয়। মাঠে কৃষি কাজ করে পরিবারে দুই বেলা দু-মুঠো ভাত দেয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিবন্ধীর বাবা আবদুর রাজ্জাকের।

তবে চাষাবাদের জন্য বিঘে দুয়েক জমি আছে। ৫ কাটা জমির উপর বাড়ি। এই বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী ও বর্তমানে দুই প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন। একই পরিবারের ৩ জন প্রতিবন্ধী মানুষ থাকার পরও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসচেতনতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সরকার থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি তারা।

অবশেষে দুই মাস আগে রাজশাহী বিভাগীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সারোয়ার জাহান শাহিনের সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। তাঁর সহায়তার ফলে বর্তমানে এই পরিবার কিছুটা সহায়তা পাচ্ছেন ।

প্রতিবন্ধীদের মা মিরা বেগম জানান, একটি স্বাভাবিক সন্তান মানুষ করতে খুব কষ্ট করতে হয়। কিন্ত পরপর ৩টি প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে যে মানষিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগেছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

প্রতিবন্ধীর বাবা আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিবন্ধীর হওয়ায় তাদের সাথে কেউ মিশতে চায় না। বাড়ির বাইরে তো যেতেও পারেনা। কোন কোন সময়ে কলে করে রাস্তার ধারে রেখে এলেও বিরুপ মন্তব্য করে। কিন্ত প্রতিবন্ধী হলেও তাদের বোঝা হিসেবে না নিয়ে অন্যান্য স্বাভাবিক সন্তানের মতোই মানুষ করে যাচ্ছি।

সমাজের কিছু মানুষের নানা রকম উক্তি সহ্য করেই শত দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন পার করছি। প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নিলেও প্রতিটি সন্তানকেই বাবার মমতা দিয়ে ভালোবাসি। এদিকে তিনি দাবি করেন বিনা সুদে কোন ব্যাংক সহায়তা করলে প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে কোন একটি দোকান দিয়ে বাকিটা জীবন ভালোভাবে কাটাতে পারতাম।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সারোয়ার জাহান শাহিন বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের সমাজে বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে দেখার কারণে, এই পরিবারটির মনে আশা জেগেছে। বিষয়টি নিয়ে মাস দুয়েক আগে আমার কাছে এসেছিল। তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। সরকার যেভাবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে এসেছে, তার প্রেক্ষিতে পরিবারটির দীর্ঘদিনের অভাব অনটন ঘুছবে।

স/আ.মি