আমানুল হক আমান, বাঘা:
রাজশাহীর বাঘার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশু জবাইসহ কাটাকুটিতে ধারালো দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে এখন কর্মমুখর হয়ে উঠেছে কামার পল্লী।
কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহা ছন্দোময় পিটাপিটিতে শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ায় তৈরি যন্ত্রপাতি খুচরা ও পাইকারি বাজারে চাহিদা মাফিক সরবরাহ করতেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এসব সরঞ্জাম তৈরীতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার কামার সম্প্রদায়ের শতাধিক লোকজন। এ সময়টাই একটু বেশি উপার্জনের আশায় বিশ্রাম বাদ দিয়েই ক্রেতাদের পছন্দ মতো মাংস কাটার যন্ত্রপাতি তৈরি করে চলেছে কামাররা। ধাতব সরঞ্জামাদি শান দিতেও ভিড় বাড়াচ্ছে। তাদের ঢুং, ঢাং, টুং টাং শব্দে ভোরেই ঘুম ভাঙছে দোকানের আশে পাশের এলাকার মানুষের।
অন্যদিকে ভ্রাম্যমান শানদানিরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে কোরবানি দাতাদের পুরোনো সরঞ্জাম শান দেয়ারও কাজে নেমেছে। অপরদিকে পশু কোরাবানি করার সরঞ্জাম কিনতে কামারদের কাছে ছুটছেন অনেকে।
উপজেলার বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, আকার ভেদে প্রতি পিস ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৫০-১৫০ টাকা, চাপাতি ৫০০-৬০০ টাকায় এবং বঁটি ২৫০-৬০০ টাকা। দিঘা বাজারে কামার শিল্পের সঙ্গে ৩৫ বছর জড়িত গোপাল কর্মকার জানান, ওইসব যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য যেসব মালামাল প্রয়োজন হয়, বাজার থেকে সেগুলো বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে তৈরিকৃত ওইসব যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। আর দাম বেশির কারণে পুরানোগুলো শান দিয়ে ধারালো করে নিচ্ছেন বেশির ভাগ লোকজন। সান দেয়ার কাজ করেও বাড়তি আয় হচ্ছে। এবারের ঈদে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।
উপজেলায় দিঘা বাজার, বাউসা বাজার, তেথুঁলিয়া বাজার, মনিগ্রাম বাজার, বাঘা বাজার, নারায়ণপুর বাজার ও বাড়িতে কামার সম্প্রদায় প্রায় শতাধিক লোক কাজ করে। দিঘার কর্মকার দোকানের মালিক আমির হোসেন জানান, দাম বেশির কারণে এখনো ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো জমে উঠেনি। যে পাথর কয়লা গেল বছর ৮০০-৯০০ টাকা বস্তা কিনেছিলাম, সেই কয়লা এ বছর কিনতে হচ্চে ১২০০-১৫০০ টাকায়। এছাড়া লোহার সরঞ্জামেরও দাম বেশি।
আড়ানী বাজারের কামার শিবেন চন্দ্র কর্মকার জানান, এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। হয়তোবা এক সময় এ পেশা আর থাকবে না। তবে কোরবানির ঈদের সময় একটু আশাবাদী হই। পূর্ব পুরুষরা এ কাজ করে আসছেন, সারা বছর তেমন কোন কাজ না থাকলেও কোরবানির সময় কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। এ পেশায় আমরা যারা আছি তারা খুবই অবহেলিত। বাবা বিশ্ব নাথ কর্মকারের সাথে ছয় বছর বয়স থেকে এ কাজে জড়িয়ে পড়ি। বাবার পেশা ধরে রেখেছি। বাবা কয়েক বছর আগে মারা গেছে। বর্তমানে ৫ সদস্যের সংসার। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মেজো মেয়ে স্বপ্না রানী কর্মকার স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। এছাড়া ছোট মেয়ে পমিলা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।
একই বাজারের কামার জিতেন কর্মকার ও লক্ষী কর্মকার জানান, এ পেশায় কাজ করে কোন রকম সংসার চলছে। তবে কোরবানির ঈদের সময় একটু চাহিদা বাড়ে। অন্য সময় বেশি সময় বসে বসে পার করতে হয়।
বাঘা মাজার গেটে খুরচা কোরবানির পশু জবাই যন্ত্র বিক্রেতা বিপ্লব জানান, আমি এখানে সব সময় এগুলো বিক্রি করি। তবে কোরবানির ঈদের সময় বেশি বিক্রি হয়।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোকাদ্দেস আলী সরকার বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার সময়ে কামাররা বেশি ব্যস্ত হয়ে যায়। এই সময় তাদের দাহিদাও বেশি হয়।
এস/আই