শুক্রবার , ২৮ জুন ২০২৪ | ১৪ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বাঘায় বাবুল হত্যা: শাহরিয়ারের বক্তব্যে রাজশাহী আ.লীগে কোন্দল প্রকাশ্যে

Paris
জুন ২৮, ২০২৪ ৩:০৮ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের জানাযা নামাজ শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাঘা পৌরসভার ৫ নম্বর ওযার্ডের গাওপাড়া গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে বাবা আমিরুল ইসলাম আমুর কবরের পাশে ছেলে বাবুলকে দাফন করা হয়। জানাযা নামাজের আগে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন আ.লীগ ও বিভিন্ন রাজিৈনক সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এদিকে বাবুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজশাহী আওয়ামী লীগে দ্ব›দ্ব এখন প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজশাহীর শীর্ষ নেতাদের দোষারাপ করে স্থানীয় এমপি শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যের পর মূলত দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ।

গতকাল থেকে মেয়র লিটনপন্থি নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক গণমাধ্যমে শাহরিয়ার আলম, প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা, ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন লিটনপন্থি নেতাকর্মীরা। আজ বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশেরও আয়োজন করা হয় রাজশাহী নগরীতে।

জানা গেছে, বাবুলের জানাযা নামাজের আগে উপস্থিথ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অভিযোগ করে বলেছেন, বাবুল হত্যার বিষয়ে গোপনে যারা মদদ দিয়েছেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। যারা বাবুল হত্যাককারীদের মদদ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আসাদুজ্জাম আসাদ ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু কেন জানাজায় আসেনি? তাদের সৎ সাহস নেই। তাই তারা এই জানাজায় উপস্থিত হননি। হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে তাদের নামে মামলা করা হবে এবং প্রয়োজনে আইনের কাঠ গড়ায় তাদের দাঁড় করানো হবে।

জানা যায় অংশ গ্রহণ করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. চিন্ময় কুমার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল প্রমুখ।

এর আগে জানাজা নামাজের উপস্থিত হতে গেলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে চলে যেতে বলা হয়। এসময় এমপি শাহরিয়ার আলমের কর্মী-সমর্থকরা অনিল কুমারকে ধাক্কা-ধাক্কি করে মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে সরিয়ে দেন। পরে সেখান থেকে অনিল কুমার বলে চলে যান।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার বলেন, সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে মরহুম বাবুলকে শেষ শ্রদ্ধা ও পরিবারকে সমবেদনা জানাতে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ আমাকে কিছু বুঝে উঠার আগে জানাজার মাঠ থেকে চলে যেতে বলেন। এর পর কেউ কেউ আমাকে ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। এসময় আমি পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখান থেকে চলে আসি।’

অনিল কুমার সরকার অভিযোগ করে বলেন, বাবুল হত্যাকাণ্ডের পর এটিকে নিয়ে কেউ কেউ নতুন করে রাজনীতি শুরু করেছেন। বিশেষ করে দলের মধ্যে তীব্র ভাঙ্গনের চেষ্টা করছেন। এটি মোটেও কাম্য নয়। বাঘা-চারঘাটে দীর্ঘদিন ধরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব বিরাজ করে আসছিল। এটি নিরসন করতে পারনেনি স্থানীয় এমপি। এখন তার দায় অন্যদের ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদও একই অভিযোগ করে বলেন, ‘বাবুল হত্যার বিচার হোক এটা আমি চাই। এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক। আমি নিজেও ফোন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোবাইলের কললিস্ট ধরে তদন্ত করতে বলেছি। এমপি শাহরিয়ার আলম তার ব্যর্থতা ঢাঁকতে এ হত্যাকাÐ নিয়ে এখন নতুন রাজনীতি শুরু করেছেন। তাঁর ব্যর্থতার কারণেই বাঘা-চারঘাটে একের পর সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা হচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু তার দায় এখন তিনি অন্যদের ওপর চাপাচ্ছেন।’

মেয়র লিটনের সংবাদ সম্মেলন:
এদিকে এমপি শাহরিয়ার আলমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘জানাযা নামাজে উপস্থিত হয়ে মরহুমের প্রতি দোয়া না করে মিথ্যাচার করা মোটেও কাম্য নয়। এমপি শাহিরয়ার আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তিনি কোন অবস্থায় ছিলেন, সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

মেয়র বলেন, ‘আমি চাই বাবুল হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা হত্যাকাÐের পর কেউ এটিকে নিয়ে জলঘোলা করুক সেটি দলীয়ভাবেও কাম্য নয়। তবে যারা জলঘোলা করার চেষ্টা করছেন, তারা অনেকেই নব্য আওয়ামী লীগ।’

বাবা হত্যার বিচার চায়লেন বাবুলের ছেলে:
নিহত বাবুলের ছেলে আশিকুর রহমান লাবু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলীসহ সকল আসামিদের গ্রেপ্তার করে দ্রæত বিচারের আওতার আনার দাবি জানাচ্ছি।’ প্রসঙ্গত, গত ২২ জুন সকাল ১০টার দিকে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের ডাকে উপজেলা পরিষদের সামনে বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে এমপি শাহরিয়ার আলম গ্রæপ।

অপরদিকে একইদিনে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির জমি রেজিষ্ট্রিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে পৌর মেয়র আক্কাছ গ্রæপ। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল গুরুত্বর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার (২৬ জুন) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মারা যান বাবুল।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর