বাগাতিপাড়ায় ‘পরাজিত সম্রাট’ যাত্রাপালা মঞ্চস্থ

মঞ্জুরুল আলম মাসুম:
কালের বিবর্তনে এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষে বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য যাত্রাপালা হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় গালিমপুরের শতবর্ষী গিরীশ নাট্য মন্দিরকে ঘিরে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন সময় মঞ্চস্থ হয় সিরাজউদ্দৌলা, টিপু সুলতান, সাগর ভাষা, রানী ভবানী, রাজা হরিশচন্দ্র, পরাজিত সম্রাটহ বিখ্যাত যাত্রাপালা।

গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে গিরিশ ধাম সংলগ্ন মঞ্চস্থ হয় ঐতিহাসিক ‘পরাজিত সম্রাট’ যাত্রাপালা। স্থানীয় শিল্পিরা এতে অংশ নেয়। দর্শক উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঐতিহাসিক যাত্রাপালা ‘পরাজিত সম্রাট’ আয়োজন করে স্থানীয় বকুল স্মৃতি থিয়েটার। আয়োজকেরা বলেন, যাত্রাটির রচয়িতা হিরেন্দ্র কৃষ্ণ দাস এবং পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের ইলামিত্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী মসগুল হোসেন ইতি। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেবাশীষ কুন্ডু, শহিদুল ইসলাম, জালাল উদ্দিন, মিজানুর রহমান, মালেক, কাশেম, চায়না মুখার্জী, রত্না সেনসহ ১১জন স্থানীয় শিল্পী।

পরিচালক মসগুল হোসেন ইতি বলেন, ইতিহাস ভিত্তিক ‘পরাজিত সম্রাট যাত্রাপালা’র কাহিনী দর্শকদের মন জয় করেছে। বোগদাদ রাজ্যের বিপত্নীক সম্রাট জাহাঙ্গীর শাহ জনদরদি সম্রাট হিসেবে সুখ্যাত ছিলেন। হিজল হাটির রাজা কৌশিক দেব তাঁর সুখ্যাত সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। শুরু করেন বোগদাদ মসনদ দখলের ঘৃন্য প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। অস্ত্র হিসেবে তিনি ব্যবহার করেন সম্রাট জাহাঙ্গীর শাহ’র ছোট বোন নাদিরা বানু ও তাঁর ছেলে সুবেদার কুদরত খাঁ কে। ঘরের শত্রু বিভীষনের চক্রান্তে বোগদাদ সম্রাটএক উন্মাদে পরিণত হলে তছনছ হয়ে যায় সম্রাটের সাধের বোগদাদ।

যাত্রাপালাটি দেখতে আসেন গ্রামের শত-শত নারী-পুরুষ। বকুল স্মৃতি থিয়েটারের সভাপতি মাহবুব হোসেন নতুন করে যাত্রাপালা শুরু হওয়ায় সন্তুুষ্টি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই মানুষ আকাশ সংস্কৃতির উন্মাদনা ভুলে আবারও রাত জেগে মঞ্চ নাটক ও যাত্রাপালা দেখুক’।

এ ব্যাপারে শতোর্ধ্ব সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব নূর মোহাম্মদ সরকার বলেন, এক সময় বাগাতিপাড়া উপজেলা ছিল বাঙালি সংস্কৃতির চারণভূমি। প্রায় একশ বছরের বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে গালিমপুর গিরীস নাট্য মন্দির। সেখানে মূলত অভিজাত হিন্দু পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় নাট্য মন্দিরে এলাকার মানুষের অংশগ্রহণে মঞ্চস্থ হতো বিখ্যাত যাত্রাপালা। এ নাট্যমন্দিরে স্থানীয়রাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিল্পী ও কলাকুশলীরা এসে অভিনয় করত। নাট্যমন্দিরের অভিনয় শিল্পীদের যাত্রাপালা তৎকালীন কলকাতার আমন্ত্রণে সেখানে মঞ্চস্থ হয়েছে। বর্তমানে এমন যাত্রাপালার আয়োজন দেখে সত্যি অভিভূত হচ্ছি।
স/শ