বাগমারায় মৎস্যজীবীদের বিল প্রভাবশালীদের দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর বাগমারায় মৎস্যজীবীদের উচ্ছেদ করে দিয়ে লিখড়া বিল দখল করে রেখেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তাদের সমর্থকেরা। বিলটি প্রভাবশালীরা দখলে নেয়ার পর থেকেই জেলেরা ওই বিলে আর মাছ ধরতে পারছেন না। ফলে বিল এলাকার কয়েকটি গ্রামের মৎস্যজীবী পরিবারের সদস্যরা এখন মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

বিলটি উদ্ধারের জন্য মৎস্যজীবীদের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় গতকাল বিষয়টি উত্থাপন করা হলে দ্রুত ব্যবস্থ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার লিখড়া বিলে দ্বীপপুর ইউনিয়নের নানসোর, হাসানপুর, চকহরি নারায়নকুন্ডু, খাঁপুর ও লাউবাড়িয়া গ্রামের এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে বিলটি সরকারি নয়। বিলটির আয়তন প্রায় চার হাজার বিঘা।
২০০৭ সালে ‘লিকড়া বিল মৎস্যচাষ প্রকল্প’ নামে একটি কমিটি গঠন করে ওই বিলে মাছ চাষ শুরু করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মৎস্যজীবী ও কৃষকদের সঙ্গে ১০ বছরের জন্য চুক্তি করেন। চুক্তিতে বলা হয়, বোরো মওসুমে কৃষকদের জমিতে বিনা মূল্যে সেচের সুবিধা দেওয়া হবে। আর মৎস্যজীবীরা মাছ চাষের সাথে যুক্ত হবেন। আর মাছ বিক্রি করে যা লাভ হবে, তা সবার মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করা হবে। গত বছর এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

মৎস্যজীবী ও কৃষকদের অভিযোগ, তাদের বোরো খেতে বিনা মূল্যে সেচ সুবিধা দেওয়া হলেও মৎস্য চাষ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি। দ্বীপপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান দুলাল, সাবেক চেয়ারম্যান বিকাশ চন্দ্র ভৌমিক, ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনসহ ২৮ ব্যক্তি এলাকার চারশতাধিক কৃষক ও মৎস্যজীবীদের বঞ্চিত করে বিলটিতে মাছ চাষ করে আসছেন।

এদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ায় কৃষকেরা তাদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে না চাইলে এবং বিলটি উন্মক্ত রাখার দাবি জানালে প্রভাবশালীরা তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। বিলটির নিয়ন্ত্রন ধরে রাখতে কৃষকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে দুইটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় ৬ মে দুইজন কৃষককে গ্রেফতারও করা হয়। এরপর গ্রেফতার অতংকে আত্মগোপন করায় জমির ধান কাটতে না পারছেন না এলাকার কৃষকরা। ফলে সঠিক সময়ে জমির পাকা ধান কাটতে না পারায় তা খেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া কৃষক ও মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় স্বাক্ষী দিতে রাজি না হওয়ায় মোফাজ্জল হোসেন টুটুল নামে এক স্বাক্ষীকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ওই স্বাক্ষী থানায় একটি জিডি করেছেন।

এদিকে খাঁপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী, হাসানপুর গ্রামের খোকন, চকহরি নারায়নকুন্ডু গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান তোফা, আকবর আলী মৃধা ও সৈয়দ আলী অভিযোগ করে বলেন, লিকড়া বিল এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক মৎস্যজীবী পরিবার রয়েছেন। যুগযুগ ধরেই তারা এ বিলের উন্মক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালীদের বাঁধায় ১০ বছর ধরে মাছ ধরতে পারেননি। তাদের মৎস্য চাষ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

লিকড়া বিল মৎস্যচাষ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান দুলাল বলেন, লিকড়া বিলে যাদের মালিকানা জমি রয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ কৃষককে এই প্রকল্পের সাথে সংযুক্ত করে সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে বিলে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কাইকে বঞ্চিত করা হয়নি। তবে একটি পক্ষ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সড়যন্ত্র করায় বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিউল ইসলাম বলেন, বিলটি দখলকে কেন্দ্র করে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় এবং মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উত্থাপন হওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, বিল নিয়ে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ তৎপর রয়েছে।

স/অ