বাগমারায় প্রভাবশালীদের দখলে দাঁড়া: মৎস্যজীবীদের মানবেতর জীবন-যাপন

বাগমারা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারার দ্বীপপুর ইউনিয়নের গুনিখালি দাঁড়াটি দখল করে নিয়েছেন এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল। এলাকার মৎস্যজীবীদের উচ্ছেদ করে দিয়ে দাঁড়াটি প্রভাবশালীরা দখলে নেয়ার পর থেকেই জেলেরা ওই দাঁড়ায় আর মাছ ধরতে পারছেন না। ফলে দাঁড়া সংলগ্ন এলাকার মৎস্যজীবি পরিবারের সদস্যরা এখন চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ অবস্থায় প্রভাবশালীদের কবল থেকে দাঁড়াটি উদ্ধারের জন্য মৎস্যজীবীদের পক্ষে হাসানপুর গ্রামের দিলিপ চন্দ্র হালদার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাগমারার দ্বীপপুর ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া রানী নদীর জোলাপাড়া মুখ থেকে লিকড়াবিলের মুখ হয়ে বিলসুতি বিলের তলা পর্যন্ত গুনিখালি দাঁড়াটি প্রথমে ১৪২৫ থেকে ১৪২৭ সাল পর্যন্ত তিন বছরের জন্য নানসর গ্রামের রমিছা বিবি নামে এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় লীজ দেওয়া হয়। এরপর রহস্যজনক কারণে উপজেলা জলমহাল ইজারা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে রমিছা বিবির নামে ইস্যু করা চিঠি বাতিল করে লাউবাড়িয়া গ্রামের প্রভাবশালী গিয়াস উদ্দিন, নানসর গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন টুটুল ও হাসানপুর গ্রামের প্রভাবশালী তপন হালদারের নামে লীজ প্রদান করা হয়।

তবে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, এ দাঁড়া সংলগ্ন হাসানপুর ও নানসর এ দু’টি গ্রামে মোট ৬০টি কার্ডধারী (সনদধারী) মৎস্যজীবী পরিবার রয়েছেন। অথচ এসব মৎস্যজীবীদের বঞ্চিত করে অমৎস্যজীবীদের নামে দাঁড়াটি লীজ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে খোদ লীজ পাওয়া গিয়াস উদ্দিন ও মোফাজ্জল হোসেন টুটুল কোনো কার্ডধারী মৎস্যজীবী নয় বলে তারা স্বীকারও করেছেন।
তারা বলেন, দাঁড়াটি লীজ পাওয়ার সুবিধার উদ্দেশ্যে এলাকার প্রভাবশালী তপন হালদার আমাদের ভূয়া মৎস্যজীবী সাজিয়ে আমাদের নাম ব্যবহার করেছে।

সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে জানা যায়, গুনিখালি দাঁড়াটি প্রভাবশালীরা লীজ পাওয়ার পর দাঁড়াটির তিনটি স্থানে বোয়ালমারি মুখে, কালিতলা ব্রীজের পাশে এবং ত্রিমোহনী মুখে মাটি ফেলে ও লোহার রডের জাল দ্বারা ফার্সিংবাঁধ দিয়ে কৃত্রিমভাবে মাছচাষ শুরু করেছেন। এতে ওই দাঁড়া দিয়ে স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল ও প্রাকৃতিক মাছ প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

এছাড়া এ দাঁড়া দিয়ে এক সময় নৌকাযোগে এলাকার কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতেন। কিন্তু দাঁড়াটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেয়ায় কারণে বর্তমানে নৌকা চলাচলও বন্ধ হয়েছে। তাছাড়া এ দাঁড়ার পানি সেচ দিয়ে কৃষকেরা বিভিন্ন ধরণের ফসল চাষ করতেন। প্রভাবশালীরা সেটাও বন্ধ করে দেওয়ায় কৃষকেরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

এলাকার মৎস্যজীবী অমূল্য চন্দ্র হালদার সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, এ দাঁড়া সংলগ্ন এলাকায় তার মতো অর্ধশতাধিক সনদধারী মৎস্যজীবী পরিবার রয়েছেন। বাপ-দাদার আমল থেকেই তারা এ দাঁড়ার উন্মক্ত জলাশয়ে স্বাধীনভাবে মাছ শিকার করে জীবীকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি প্রভাবশালীরা ক্ষমতার দাপটে তাদের উচ্ছেদ করে দিয়ে দাঁড়াটি দখল করে নেয়ায় তারা আর মাছ ধরতে পারছেন না। ফলে গরিব ও অসহায় মৎস্যজীবী পরিবারগুলো এখন অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে চরম মানবেতন জীবন-যাপন করছেন।

উপজেলা জলমহাল ইজারা কমিটির সভাপতি বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিউল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, দাঁড়াটি উন্মক্ত থাকা বাঞ্চনীয় হলেও রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে তিন বছরের জন্য খাস আদায়ের আদেশ দেয়া হয়েছে। তবে দাঁড়াটি যারা লীজ পেয়েছেন তারা প্রকৃত মৎস্যজীবী না হলে প্রমান সাপেক্ষে তা বাতিল করা হবে।
স/শ