বাগমারায় পাকা ধান ঘরে তুলতে সীমাহীন দূর্ভোগে কৃষক

বাগমারা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারায় এখন মাঠের পর মাঠ ও বিল জুড়ে শোভা পাচ্ছে আধা পাকা বোরো ধান। বোরোর এমন বাম্পার ফলন দেখে কৃষকের মনে উঁকি দেয় রঙ্গিন স্বপ্ন। আশায় বুক বাঁধে কৃষক। তবে কৃষকের এমন স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনে। তলিয়ে গেছে কৃষকের বোরো ক্ষেত। তার উপর ধান কাটা শ্রমিক সংকটে কৃষক পড়েছে মহা বিপদে। দ্বিগুনের বেশি মজুরী দিয়েও মিলছে না শ্রমিক।

এই উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা এলাকার কৃষকের এখন দম ফেলার সময় নেই। ইতিমধ্যে উপজেলার বারনই ও রানী নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বিলে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় অনেক বিলে কৃষকের আধা পাকা ধান তলিয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার বিলসৌতি, সোনাবিলাই, নাককাঠি, কাদারবিল, জৌকা বিল, খয়রা বিল, বিলমাললি, যসেরবিল ও খয়রা বিলসহ বেশ কয়েকটি বিলের নীচু এলাকার বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

কাচারীকোয়ালীপাড়া গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী ও মুনতাজ হোসেন জানান, এবার বোরো ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ২৮ থেকে ৩০ মন হারে ধানের ফলন হয়েছে। কিন্তু পানিতে ধান ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় অর্ধেক ধান শ্রমিককে দিয়ে তাকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করতে হয়েছে।

বিহানালী গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী জানান, তিনি এবার ১২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। আবাদও ভালো হয়েছে । তবে সম্প্রতি অতি বৃষ্টির কারণে তার ৬ বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। এখন শ্রমিক সংকটে ওই পাকা ধানগুলো কাটার কোন ব্যবস্থা করতে পারেননি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিলসৌতি বিলে সম্প্রতি অতিবর্ষণের কারণে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে তা সহসা নিরসন হবার নয়। তার মতে, রানী নদী বাগমারা গ্রামে বারনই নদীর সাথে মিশে সেটি তাহেরপুর ও নলডাঙ্গা হয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু নালডাঙ্গায় রাবারড্যাম স্থাপনের কারণে সেখানে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। রাবার ড্যামের কারণে এই উভয় নদীর পানি আগে থেকেই ফুঁলেফেঁপে ছিল। সম্প্রতি গত কয়েকদিনের অতিবর্ষণে নদীর পানি আরো ফুঁলেফেঁপে উঠেছে। ফলে এখন বিলের পানি নেমে যাওয়া তো দুরের কথা নদী থেকেই বিলগুলোতে পানি প্রবেশ করছে।

তিনি জানান, এসব বিলের মুখে মুখে স্লুইসগেট নির্মান করা হলেও সেগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। এখন নদীর পানি ওই সব স্লুইস গেটের অকেজো গেট দিয়ে বিলের মধ্যে প্রবেশ করছে। ফলে বিলের পানি অপসারন নিয়ে কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে।

ভুক্তভোগি কৃষকদের মতে, প্রতিদিন যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে দেরি করলে ফসল ঘরে তোলা আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এসব বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাজিবুর রহমান জানান, শেষ সময়ে এসে প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে কৃষক বাম্পার ফলন পেতেন। সব সময় ফসল বাঁচাতে কৃষকদের বিভিন্ন উপায় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে স্বল্প মেয়াদী ও আগাম জাতের ধান চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।
স/শ