বাগমারায় পাউবো’র ভেঙ্গে যাওয়া বাধে বাঁশের সাঁকো তৈরী করছেন গ্রামবাসী

রাশেদুল হক ফিরোজ, বাগমারা:


রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের লাউবাড়িয়া গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় কয়েকটি ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষের চলাচলের চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ফলে লাউবাড়িয়া গ্রামবাসীর উদ্যোগে বুধবার (২৯জুলাই) থেকে সেখানে বাঁশের সাঁকো তৈরীর কাজ শুরু করা হয়েছে।

গত ১৬ জুলাই দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বন্যার প্রবল চাপে ওই বাঁধ ভেঙ্গে কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সরকারি কোন সহায়তা না পাওয়ায় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাঁকো তৈরী করছেন বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

জানা যায়, উপজেলার কাচারীকোয়ালিপাড়া ইউনিয়নের পীরগঞ্জ বাজার থেকে দ্বীপপুর ইউনিয়নের মীরপুর পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই বাঁধটিই এলাকার চলাচলের একমাত্র রাস্তা। ওই রাস্তার দুই প্রান্তেই পীরগঞ্জ ও জোলাপাড়া বাজার। রোববার ও বুধবার এলাকার বড় হাটের মধ্যে জোলাপাড়ার হাটবার।

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, পারাপারের জন্য ভাঙ্গা জায়গায় পাঁচ/ছয় হাজার টাকার একটি দায়সারা নৌকা দেন দ্বীপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান দুলাল। নৌকার কোন পাটাতন না থাকায় এবং ফুটো দিয়ে পানি প্রবেশ করায় সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পানিতেই তলিয়ে থাকতে দেখা যায়।

ওই বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় স্থানীয়রা ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই তোতা মিয়াকে দায়ি করে বলেন, তিনি (তোতা মিয়া) সেখান থেকে মেশিন দিয়ে মাটি তুলে তার ইট ভাটায় দেয়ার কারনে সেখানে গর্তের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ওই পাশ দিয়ে জোলাপাড়া হাটের যাবার রাস্তাটিও তিনি কেটে মাটি নিয়েছেন।

লাউবাড়িয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান, রেজাউল ইসলাম, বাবর আলী, জুয়েল, আব্দুর রশিদ মাস্টার, বাবর আলী, নাসির উদ্দিনসহ শতাধিক লোকজন বলেন, প্রায় ত্রিশ বছর ধরে পাউবো’র পীরগঞ্জ-মীরপুর বাঁধের কোন সংস্কার করা না হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ওই পথ। মীরপুর, লাউপাড়া, পীরগঞ্জ, কাষ্টনাংলা, মোহনপুর, কাচারীকোয়ালীপাড়া, জাংগালপাড়া, হুলিখালি, হাটজোলাপাড়া, বীরকয়া, বাসুদেবপাড়া, হলুদঘর, গোড়সাড়, মন্দিয়াল, কালিকাপুরসহ নরদাশ, সোনাডাঙ্গা, কাচারীকোয়ালীপাড়া ও দ্বীপপুর ইউনিয়নের অন্তত বিশটি গ্রামের লোকজনের চলাচলের একমাত্র পথ বাঁধের ওই সড়ক পথ। বাঁশের সাঁকো তৈরী করে তারা চলাচলের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা খয়ের আলী জানান, ভোটের আগে জনপ্রতিনিধিরা রাস্তা করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে শুধু ভোট নিয়ে পালিয়ে যায়। আমরা গ্রামের লোকজন একত্রিত হয়ে বাঁশ ও অন্যান্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে বাঁশের সাঁকো তৈরী করছি। এখানে সরকারি ভাবে কোন সহযোগীতা করা হয়নি বলে জানান তিনি।

তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে যে রাস্তা দিয়ে জোলাপাড়া হাঁটে গিয়েছি তা চেয়ারম্যানের ভাইয়ের কারনে নষ্ট হয়ে গেছে।

ভ্যান চালক আবু তালেব জানান, এই বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তার রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। বাঁশের ওই সাঁকো তৈরী হলে ভ্যান বের করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন জানান, এলাকার মানুষ অবহেলিত অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। চলাচলের একমাত্র রাস্তাটিও চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বাঁধের ওই রাস্তাটি পাকাকরন করে ক্ষতিগ্রস্থ জায়গায় একটি স্লোইস গেট নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন।

দ্বীপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান দুলালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

স/অ