বাগমারার ত্রাস বখাটে রকি: ইয়াবা ব্যবসা, পুকুর দখলসহ ছিল টর্চার সেল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জমি দখল, পুকুর দখল থেকে শুরু করে মেয়ের উত্ত্যক্ত করা, চাঁদাবাজি করাসহ ইয়াবার নিয়ন্ত্রণও ছিল তার হাতে। বাগমারা শিকদারীজুড়ে ইয়াবার নিয়ন্ত্রণ ছিল তার। এমনকি নিজের চাচাতো ভাইও পিটিয়েছেন তিনিসহ তার সহযোগীরা। কিন্তু প্রশাসন ছিল তার কাছে তটস্থ। ফলে এমপির ভাতিজা পরিচয় দিয়ে গোটা বাগমারা দাঁপিয়ে বেড়াতেন তিনি। সেই সুবাদে শত অপকর্ম করলেও তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি।

আর সেই তিনি হলেন, বাগমারার সাঁকোয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে হাসান তারিক ওরফে রকি (২৮)। তবে শেষ পর্যন্ত এই বখাটের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি পলাতক রয়েছেন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, পাওনা টাকা আদায়ের জন্য আতাউর রহমান (৩২) নামের কৃষি অফিসের এক কর্মচারীকে নারী বন্ধুসহ অপহরণ করে আটকে রেখে নির্যাতন করেছেন রকিসহ তার সহযোগীরা। দুদিন ধরে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ওই কর্মচারীকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

এ ঘটনার পর বখাটে রকিসহ তার সহযোগীরা পলাতক রয়েছে। এই সহযোগীরা কেউ তাহেরপুর এলাকার বাসিন্দা, কেউ ঝিকড়া এলাকার আবার রাজশাহীর বাসিন্দা। বাইরের সন্ত্রাসীদের নিয়ে চলাফেরা করতেন রকি। আর বাগমারাজুড়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে বেড়াতেন।
এমপি এনামুলের ভাই ফরহাদ হোসেন জানান, বখাটে হাসান তারিক ওরফে রকি সম্প্রতি ফরহাদের ছেলেকেও পিটিয়েছে। ফরহাদ সম্পর্কে রকির চাচা হন। এছাড়াও এমপির ছোট ভাই রেজাউলের স্ত্রীকে বাড়িতে ঢুকে মারপিট করেন রকির বাবা তোফাজ্জল। ওই মামলায় তোফাজ্জলকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ।
এদিকে আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই রকি এলাকায় পুকুর দখল, জমি দখল থেকে শুরু করে ইয়াবা ব্যবসারও নিয়ন্ত্রণ করতেন। পাশাপাশি এলাকায় নারীদেরও উত্ত্যক্ত করতেন তিনি। সেই সঙ্গে সমানে চাঁদাবাজি করে বেড়াতেন। সাঁকোয়া এলাকায় তার বাড়ি হলেও শিকদারী এলাকায় এক প্রবাসীর বাড়িতে তিনি সময় কাটাতেন। আর এই বাড়িটিই হলো রকির টর্চার সেল। এখানে লোকজনকে ধরে এনে চালাতেন নির্যাতন। স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলত রকির এই টর্চার সেল। ফলে এলাকাবাসীও তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পেতেন না।
এদিকে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে কৃষি অফিসের এমএলএস আতাউর রহমানসহ তার বান্ধবীকে তুলে দুই দিন ধরে আটকে রেখে এখানেই নির্যাতন চালানো হয়। শেষে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ বৃহস্পতিবার (২৮ মে) বিকেলে চোখ ও হাত আতাউরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। রাতে ওই কর্মচারীর নারী বন্ধুকে সাংসদের ছোট ভাইয়ের সহযোগিতায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই নারীর স্বজনদের কাছে খবর দেওয়া হলে তাঁরা থানায় এসে তাঁকে নিয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ মে) রাতে আতাউর রহমান বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে রকি ও তার সহযোগীরা পলাতক রয়েছে।
অন্যদিকে রকির এসব অপরাধ নিয়ে জানতে চাইলে বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, সে এলাকায় বখাটে বলে পরিচিত। এছাড়াও নানা অপরাধে জড়িত থাকার তথ্যও আসছে। এগুলো খুঁজে দেখা হচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
স/আর