বাগমারায় উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চলছে ৯ ইটভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করায় গত বছর রাজশাহীর বাগমারায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে করে দেওয়া হয় একটি ইটভাটা (ইটখোলা)। কোনো রকম নিয়ম-নীতি না মেনে লোকালয়ে ইটভাটা গড়ে তোলায় ‘লয়ার সোসাইটি ফর ল’ এর উদ্যোগে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ইটভাটাটি উচ্চ আদালতের নির্দেশে বন্ধ করে দেন ভ্রাম্যমান ম্যাজিস্ট্রেট। এরপর থেকে ভাটাটি বন্ধই ছিল। কিন্তু সেই ভাটাটি কিনে নিয়েছেন রাজশাহী জেলা পরিষদের সদস্য ও বাগামারা উপজেলা তরুণ লীগের সভাপতি জাফর আলী।

তিনি বাগমারার রামরামা আরঙ্গবাদ গ্রামে গড়ে তোলা ইটভাটাটি চালু করেছেন এবার। শুধু তিনিই নন, তাঁর মতো উচ্চ আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া ৯টি ইটভাটা আবার চালু করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীরা। কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফলে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশের ক্ষতি করার কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরে বাগমারার রামরামা, ভাগনদী, বিরকুৎসা, মচমইল, মাদারিপুর, শ্রীপুর, মীর্জাপুর, কামারখালি ও হাটগাঙ্গপাড়া এলাকায় মোট নয়টি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু এবার মৌসুমের শুরুতেই সবকয়টি ইটভাটা চালু করা হয়েছে। সঙ্গে অন্যান্য ইটভাটা মিলে মোট ৫০টি ভাটা চালু হয়েছে এবার। নতুনও রয়েছে কয়েকটি।

এলাকাবাসীর মধ্যে নজরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, গ্রামের মধ্যে গড়ে উঠেছে একের পর এক ইটভাটা। ভাটার কারণে আমাদের চরম ক্ষতিরমুখে পড়তে হয়। এলাকার আশে-পাশের নারিকেল গাছ মরে যাচ্ছে। আমের মৌসুমে আম ধরে না গাছে। ধরলেও আম পচে যায় গাছে। ভাটায় ইচ্ছেমতো কাঠ পড়ানোর ফলে দিনের বেলা আশে-পাশের বাড়িগুলোতে ছায় এসে জমা হয়ে থাকে। পরিবেশগত ভাবেও ক্ষতিরমুখে পড়তে হয়েছে আমাদের। কিন্তু প্রশাসন এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা তাহলে কার কাছে যাবো?

নাবিউল ইসলাম নরামের এক ব্যক্তি বলেন, যারা ইটভাটা চালু করেছেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা বা কর্মী হিসেবে পরিচিত। তাদের কারণেই প্রশাসন বন্ধ করে দেওয়ার পরেও আবারো সেই ভাটাগুলো চালু করা হয়েছে।

বাগমারার আইনজীবী জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এলাকাবাসীর ক্ষতির কথা বিবেচনা করে আমরা ‘লয়ার সোসাইটি ফর ল’র উদ্যোগে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত থেকে ৯টি ইটভাটা বন্ধ করে দেন ভ্রাম্যমান আদালত। কিন্তু এ বছর আবারো সেই ইটভাটাগুলো চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই ভাটাগুলো চালু করেছেন। ফলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

জানতে চাইলে ইটভাটা মালিক জাফর আলী বলেন, ‘আমি ইটভাটা চালাচ্ছি কিন্তু ইচ্চ আদালতের কোনো নির্দেশনা আছে কিনা বলতে পারব না। আমি আমার মতো করে চালাচ্ছি। জামাইয়ের কোনো সহযোগিতা নাই।’

গত বারের ইটভাটা মালিক আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমার ভাটাটি গতবার বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। এ বছর আমি আর চালাতে না পেরে বিক্রি করে দিয়েছি। যিনি কিনেছেন তিনি এখন ভাটাটি চালাচ্ছেন। তবে আমি চালাতে পারিনি। কেন পারিনি তা প্রশাসনই ভালো জানে।’

এদিকে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতী শরীফ আহম্মেদ বলেন, ‘বন্ধ করে দেওয়ার পরে নতুন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। ইটভাটাগুলো কিভারে চালু হলো আমার জানা নাই। এ নিয়ে খোঁজ নিয়ে পরবর্তি ব্যবস্থা নিব।’