বাগমারায় ঘোড়ায় এলেন বর, বউ নিয়ে গেলেন পালকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক :

এদিন দুপুরে মতিউর রহমান নামের এক যুবক প্রায় এক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যান কনের বাড়িতে। সঙ্গে নেন পালকি ও বরযাত্রীদের।

মতিউরের গ্রামের বাড়ি উপজেলার সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের ভরট্ট গ্রামে। তার বাবা একজন মাদরাসাশিক্ষক। তার নাম আবদুল মান্নান। আর মতিউরের মা একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তার নাম হালিমা খাতুন।

আর এই দম্পতির একমাত্র ছেলে হচ্ছেন- মতিউর রহমান। এছাড়া কনে ফারহানা আঁখির গ্রামের বাড়িও ওই একই ইউনিয়নে। তার বাবা আজাহারুল হক সোনাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন।

মতিউরের দাদা আহম্মদ হোসেনও ঘোড়ায় চেপে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন। তাই নাতিরও শখ হয়েছিল একইভাবে বিয়ে করতে যাওয়ার। আর ছেলের ইচ্ছা পূরণেই আজ ওই গ্রামে করা হয়েছিল ব্যতিক্রমী সব আয়োজন।

আর তাদের বিয়ের দাওয়াত খেতে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে গিয়েছিলেন রাজশাহীর বাগমারা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। বিয়ে শেষে আবার ঢাকা ফিরেছেন হেলিকপ্টারেই।

গ্রামের মানুষ এই বিয়ে দেখতে শনিবার দুপুর থেকেই উৎসুক হয়েছিলেন। বিয়ের পর ঘোড়ায় চেপে নতুন বউ নিয়ে গেছেন পালকিতে করে। আর এই বিয়ের সাক্ষী হয়েছেন পুরো গ্রামের মানুষ।

এছাড়া বিয়েতে হেলিকপ্টার নিয়ে দাওয়াত খেতে যাওয়ার বিষয়টিও গ্রামের চায়ের কাপে ঝড় তুলেছে। প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টার নিয়ে এমপির নিজ এলাকায় যাওয়ায় পুরো আয়োজনটি যেন পেয়েছিল ভিন্নমাত্রা।

জানা যায়, পারিবারিকভাবেই ফারহানা আঁখির সঙ্গে মতিউর রহমানের বিয়ে ঠিক হয়েছিল।  চীন থেকে সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছেন মতিউর রহমান। আর কনে ফারহানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। দুই পরিবারের সম্মতিতেই আজ শনিবার তাদের বিয়ের দেওয়া হয় মহা ধুমধামে।

এই বিয়ের পূর্ণতা আনতে আয়োজন চলছিল বেশ কয়েক দিন থেকেই। গ্রামের একজন কাঠমিস্ত্রি তিনদিন চেষ্টা চালিয়ে পালকটি বানিয়েছেন। এর পাশাপাশি কনের বাড়িতে নিয়ে যেতে উপজেলার শেরকোল শিমলা গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে একদিনে জন্য ঘোড়াটিও ভাড়া করা হয়েছিল বরের জন্য। শেষ পর্যন্ত সবকিছু হয়েছে পরিকল্পনা মাফিকই।

বিয়ের মূল অনুষ্ঠান শেষের পর শনিবার ঘোড়ায় চেপে পালকিতে করে নববধূ নিয়ে নিজ বাড়িতে রওনা দেন বর। সঙ্গে পায়ে হেঁটে চলেন বরযাত্রীরাও। যা দেখতে ভিড় করেন আশপাশের গ্রামের উৎসুক মানুষ।

মতিউরের মা হালিমা খাতুন বলেন, একমাত্র ছেলের ইচ্ছা পূরণের জন্যই ছিল এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন। দাদার মতো ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করে কনে নিয়ে এসেছে। এতে ছেলের শখও মিটেছে আবার বহু বছর পর গ্রামীণ ঐতিহ্যও ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এমন আয়োজন সৃষ্টি করেছে চমক।

কনের বাবা ইউপি চেয়ারম্যান আজাহারুল হক বলেন, আমার একমাত্র মেয়ে। তাই যতটা পেরেছি ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করেছি। এই আসনের সংসদ সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীসহ বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ হাজার মানুষকে নিমন্ত্রণ করেছিলাম। আর দুই পরিবারে ইচ্ছা ও আয়োজনে আজ ব্যতিক্রমী বিয়ে হয়ে গেল। ব্যতিক্রম এমন উদ্যোগে বর-কনেসহ আত্মীয়স্বজন সবাই মুগ্ধ।

এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউর রহমান বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আজ হেলিকপ্টার এসেছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় ফুটবল মাঠে এই হেলিকপ্টার নামে। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে আবার হেলিকপ্টারেই ফিরে যান এমপি।