বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলেন খোকসার সোহাগ বিশ্বাস

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: খোকসার প্রত্যন্ত গ্রাম একতারপুরের ছেলে সোহাগ বিশ্বাস। ছেলেবেলায় আর পাঁচটি গ্রামীণ ছেলের মতোই জীবনযাপন ছিলো সোহাগ বিশ্বাসের। পুকুর কিংবা বাড়ির পাশে হাওড় ও নদীতে সাঁতার কাটা ছিলো সোহাগ বিশ্বাসের নেশা। গ্রামের অবোধ সেই ছেলেটিই সোমবার জয় করলেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলা চ্যানেল!  ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার এবং এক্সট্রিম বাংলার আয়োজনে ১৩ তম আসরে প্রয়াত কাজী হামিদুল হক স্মরণে অনুষ্ঠিত বাংলা চ্যানেল সুইমিং-এ ফরচুন বাংলা চ্যানেল সুইমিং ২০১৮ টাইটেলে এবারের এই প্রতিযোগিতায় ২৮ জনের ভিতর সফল ভাবে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া ১৮ জনের মধ্যে সোহাগ বিশ্বাস একজন। ১৬.১ কিলোমিটার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে তাঁর সময় লেগেছিল ৫ ঘন্টা ২৫ মিনিট। পথিমধ্যে সমুদ্রের মধ্যেই করেছেন ৫ বার বমি; তারপরেও থেমে থাকেনি দুর্বার এই তরুণ।সাঁতারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এডিবল অয়েল এর সিনিওর ব্র‍্যান্ড এক্সিকিউটিভ আবদুল্লাহ আল মুহিন ।এই সোহাগ বিশ্বাসই ছোটোবেলায় দৌড়াতে পারতেন না বলে গ্রামের প্রচলিত কোনো খেলাতেই তাঁকে খেলতে নিতো না। কিন্তু এখন তাঁর যে ফিটনেস; তিনি একটানা সারাদিন’ও দৌঁড়াতে পারবেন। প্রতিদিন সকালে উঠে ৪/৫ কিলোমিটার দৌড়ানো তাঁর কাছে যেন অনেকটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। সকালে নিয়মিত ব্যায়াম তাঁর কাছে একেবারেই রুটিনওয়ার্ক। শুধু সাঁতারেই সীমাবদ্ধ নয় এই অদম্য তরুণটি। তিনি ‘ঢাকা চ্যালেঞ্জ ২০১৭’ প্রতিযোগিতায় ট্রায়াথলনে ৬ষ্ঠ হয়েছিলেন। নামের সাথে চ্যালেঞ্জ যুক্ত আছে, আসলে এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপারই বটে! যেখানে প্রতিযোগীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে ৪০০ মিটার সাঁতারের পর ৩২ কিলোমিটার সাইক্লিং করে হাতিরঝিলে পৌঁছোবেন এবং সেখানে ৮ কিলোমিটার দৌড়ে প্রতিযোগিতা শেষ করবেন। প্রথম হয়েছিলেন ফরাসি নাগরিক নিকোলাস ব্রোকার্ড সাইদি ১ ঘন্টা ৪৯ মিনিটে। সোহাগ বিশ্বাস ২ ঘন্টা ১০ মিনিটে এই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন। যা কিনা রীতিমত অনবদ্য ও ভয়ংকর।এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের অভিযাত্রী দলের একজন সহযাত্রী সোহাগ বিশ্বাস। তাদের দল অভিযাত্রী কয়েকবছর ‘শোক থেকে শক্তি’- অদম্য পথযাত্রা’র আয়োজন করে আসছে। দেশজুড়ে রয়েছে এই অভিযাত্রী দলের পদচারণা। সাইকেল নিয়ে ঘুরছেন সারাদেশ। সম্প্রতি ‘ঢাকা হাফ ম্যারাথন’ এ ২১.১ কিলোমিটার দৌঁড়েছেন ১ ঘন্টা ৫৭ মিনিটে। সম্ভবত তিনিই প্রথম ঢাকা হাফ ম্যারাথনে ৩ বার দৌঁড়েছেন।সোহাগ বিশ্বাস বলেন, অ্যাডভেঞ্চার একটা নেশার মতো! সাইক্লিং, দৌড়, সাঁতার সবই করতে ভাল লাগে! নতুন যায়গা, নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, নতুন যেকোন চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি! কঠিন যেকোন একটা অ্যাডভেঞ্চারে সফল হতে পারলে মানসিক শক্তি অনেক বেড়ে যায়! জীবনে চলার পথে সবক্ষেত্রে সেটা কাজে লাগে! তিনি বলেন আমার অ্যাডভেঞ্চার জগতে আসা নিশাত মজুমদার (প্রথম বাংলাদেশী এভারেস্ট বিজয়ী) ও জাকারিয়া বেগ এনাদের মতো মানুষদের সংস্পর্শে এসে! তাই আমার বেশি আগ্রহ পর্বতারোহী হবার! মে মাসে নেপালে একটা পাহাড়ে যাবার কথা আছে। সেটা এখনএ সবকিছু ঠিক হয়নি। ঠিক হলে জানতে পারবেন!সোহাগ বিশ্বাস ২০০৫ সালে ঈশ্বরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উন্নীত হয়ে খোকসা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে অনার্স ও মার্স্টাস শেষ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।উল্লেখ্য গত ২০০৬ সালের ১৪ জানুয়ারি বাংলা চ্যানেলের যাত্রা শুরু হয়। মূলতঃ এটি টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ১৬.১ কিলোমিটার দীর্ঘ পানিপথ। এটির স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন প্রয়াত কাজী হামিদুল হক। যিনি নিজেও একজন বিখ্যাত আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফার ও স্কুবা ডাইভার এবং নানাবিধ অ্যাডভেঞ্চার এর সাথে জড়িত ছিলেন। তাঁর তত্ত্বাবধানেই প্রথম বারের মতো ফজলুল কবির সিনা, লিপটন সরকার এবং সালমান সাঈদ ২০০৬ সালে ‘বাংলা চ্যানেল’ পারি দেন। এরপর থেকে প্রতিবছরই এই আয়োজন করা হয়ে থাকে এবং আস্তে আস্তে এটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পায়।