বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতার ভিত্তিতেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে: সু চি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা নিতে সম্মত মিয়ানমার; এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। গত ৭ জুন নেপিদোতে  জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আশাহি শিমবুনকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আইন বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন বিদেশি পরামর্শকদের সহায়তা নিতে আপত্তি নেই মিয়ানমারের। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতার ভিত্তিতেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সু চি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্র এই সেনা অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ আখ্যা দিয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার প্রস্তুত থাকার কথা বলে আসলেও বহিরাগত কাউকে সেখানকার পরিস্থিতি মূল্যায়নের সুযোগ দিতে অস্বীকার করে আসছিল।

বাংলাদেশের সঙ্গে একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তার অধীনে এখনও কোনও রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আর বৈধ কাগজপত্রের অজুহাত তুলে তারা প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করে যাচ্ছে। ওদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের আগে রোহিঙ্গাদের সেখানে ফিরিয়ে দিতে রাজি নয়। প্রত্যাবাসনকে যথাযথ করতে তাই চলতি মাসে জাতিসংঘ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আশাহি শিমবুনকে সু চি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যে সমঝোতা হয়েছে আমরা সে মোতাবেকই আগাব।’ মিয়ানমার সরকার গত মে মাসে ঘোষণা করেছে, রোহিঙ্গাদের আবাস্থল রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনও ঘটনা ঘটেছে কি না তা তদন্ত করে দেখতে বিদেশি আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। সু চির ভাষ্য, ‘আমরা মনে করি তদন্ত কমিশনটি আমাদের পরামর্শও দিতে পারবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাখাইনে পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়ক হবে।’ রাখাইনের বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা অবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সেখানে শান্তি ‘রাতারাতি অর্জন করা সম্ভব নয়।’

মিয়ানমারে ফেরত গেলে আবার আক্রান্ত হওয়ার যে আশঙ্কার কথা বলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে সু চি বলেছেন, ‘আমাদেরকে সব নাগরিকদেরই নিরাপত্তা দিতে পারতে হবে, বিশেষ করে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে। সেজন্য আমরা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।’ জাতিগত সমস্যাগুলোর সমাধানে তার সরকারের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে প্রচণ্ড সমালোচনা কুড়িয়েছে সে বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে অং সান সু চি বলেছেন, ‘একটা ঘটনাকে এক এক দিক থেকে দেখা যায়। তারা তাদের মতো করে ব্যাখ্যা কয়েছেন। আমাদের অনুধাবন তাদের চেয়ে ভিন্ন।’

 

 

বাংলাট্রিবিউন