বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু: পুতিন

বাংলাদেশকে রাশিয়ার পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক পরস্পরের মধ্যে সমতার ভিত্তিতে নির্মিত। এ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ৫০ বছর আগে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় শিল্প ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সহায়তা করেছে।’

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রাশিয়া শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে না, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পুরো লাইফ সাইকেলই আমরা বাংলাদেশকে সাপোর্ট দেবো। পারমাণবিক জ্বালানির টেকসই সরবরাহ, কারিগরি সেবা, ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি স্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে রাশিয়া। রূপপুর প্রকল্পের সহযোগিতার কাঠামোতে রাশিয়া বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ তৈরি করছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পারমাণবিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী বেশি। তাদের সংখ্যা অবশ্যই বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ প্রকল্পে আমাদের দুই দেশেরই স্বার্থ রয়েছে, যা পরস্পরের সম্পর্ক আরও গভীর করেছে।’

পুতিন বলেন, ‘২০১৩ সালে পাবনায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরপর ২০১৭ সালে পূর্ণমাত্রার গবেষণার কাজ শেষ হলে পদ্মার কূলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ঢালাই কাজ শুরু হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের পুরো মেয়াদে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখছি। একই সময়ে দুটি ইউনিটের কাজ চলছে, যাতে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন চুল্লি ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্ট ২০২৪ সালে এবং ২য় ইউনিট ২০২৬ সালে চালু করবো। প্রকল্পটি পূর্ণমাত্রায় চালু হলে এটা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ মেটাবে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করবে।’

তিনি বলেন, ‘এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো কার্বন নিঃসরণ করবে না। যা পরিবেশের জন্য খুব ভালো হবে। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে, জনগণের ভালো হবে। এখানকার শ্রমিকরা ভালোভাবে কাজ করছেন। এখানে ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নাগরিক। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘নির্মাণকাজে মালামাল সরবরাহ, পরিবহন এবং অন্যান্য সেবার জন্য স্থানীয় কোম্পানি কাজ করছে। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতীয় বন্ধুরাও সাহায্য করছে।’

তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সময় অত্যাধুনিক প্রকৌশলী সিদ্ধান্ত আর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যাতে বিশ্বের নিরাপত্তা ও পরিবেশগত নিয়ম পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার নিয়ম ও সুপারিশ মেনে এসব করা হচ্ছে। রূপপুর প্রকল্পে নিরাপত্তা নির্ভরযোগ্য এবং অত্যাধুনিক।’

পুতিন বলেন, ‘রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরবরাহের সনদ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মার্যাদা পাবে বাংলাদেশের প্রথম এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প।’

তিনি বলেন, ‘গতবছর আমাদের দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী ছিল এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মস্কোতে ঐতিহাসিক সফরের সুবর্ণজয়ন্তী ছিল। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সার্বিক সহযোগিতার জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন। আর শেখ হাসিনা তার পিতার কাজ সফলভাবে ও সম্মানের সঙ্গে অব্যাহত রাখছেন। রাশিয়া-বাংলাদেশের বন্ধনের একটি উদ্যোগ হলো যৌথ প্রকল্পের বাস্তবায়ন।’

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা গভীর। অনেক ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।’