বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট ক্রিকেট: যে লজ্জার রেকর্ডে নাম লেখালো বাংলাদেশ দল

সিল্কসিটিনিউজ ক্রীড়া ডেস্ক:

চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ২২৪ রানে। টেস্ট ক্রিকেটের নবীনতম দলের সাথে বাংলাদেশের এমন হারের পর আলোচনা-সমালোচনা এখন সবখানে।

এর ফলে যে একটা অন্যরকম রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল! আর তা হল বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম দল হিসেবে টেস্টে ভিন্ন দশটি দেশের কাছে প্রথম দেখাতেই হারলো বাংলাদেশ।

যার শুরুটা হয়েছিল ২০০০ সালে। সে বছরের ২৬শে জুন আইসিসির দশম দেশ হিসেবে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। আর দশই নভেম্বর ঢাকায় নিজেদের উদ্বোধনী টেস্টে তারা মুখোমুখি হয় ভারতের।

প্রথম টেস্ট

বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দারুণ লড়াই করেছিল।

বিশেষ করে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৪৫ রান নজর কাড়ে ক্রিকেট বিশ্বের।

বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলবাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল

তবে ২য় ইনিংসের ব্যর্থতায় বাংলাদেশ চতুর্থ দিন পার হওয়ার আগেই ম্যাচটি হেরে যায় ৯ উইকেটে।

জিম্বাবুয়েতে দ্বিতীয়

নিজেদের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে পরের বছর জিম্বাবুয়ে যায় বাংলাদেশ দল।

হারারেতে স্বাগতিকদের সাথে প্রথম দেখায় সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে যায় ইনিংস ও ৩২ রানের বিশাল ব্যবধানে।

বাংলাদেশের সাথে টেস্টে টানা সাত ম্যাচ অপরাজিত ছিল জিম্বাবুয়ে

বাংলাদেশের সাথে টেস্টে টানা সাত ম্যাচ অপরাজিত ছিল জিম্বাবুয়ে

এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ

একই বছর এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ সাদা পোশাকে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সাথে প্রথম দেখায় হারের বৃত্ত পূরণ করে।

পঞ্চম দল নিউজিল্যান্ড

২০০১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় নিউজিল্যান্ডের। কিন্তু ফলাফল ঐ একই।

অর্থাৎ প্রথম দেখাতেই হার। নিজেদের মাটিতে কিউইরা সহজে ইনিংস ব্যবধানে জয়লাভ করে।

এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা

দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিল বাংলাদেশ দল।

কিন্তু সেই সময়ের কার্স্টেন-স্মিথ-ক্যালিসদের নিয়ে গড়া দলের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি জাভেদ ওমর-হাবিবুল বাশাররা।

যথারীতি ইনিংস ব্যবধানে জেতে স্বাগতিক প্রোটিয়ারা।

 
মিঠুন১৯ বছর ধরে খেললেও এখনো টেস্টে থিতু হতে পারেনি বাংলাদেশ

আনলাকি সেভেন

বাংলাদেশের সাথে প্রথম দেখায় জয় পাওয়া সাত নম্বর দলের নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

২০০২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে আসে ক্যারিবীয়রা।

কিন্তু গেইল-চন্দরপলদের দল একটুও ছাড় দেয়নি স্বাগতিকদের। ইনিংস ও ৩১০ রানের বিশাল জয়েই সিরিজ শুরু করে তাঁরা।

আটে অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার সাথে সাদা পোশাকে বাংলাদেশের প্রথম দেখা হয় ২০০৩ সালের জুলাইয়ে।

সে সময়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশকে।

প্রথম টেস্টই জিতেছিল ইনিংস ব্যবধানে।

ন’য়ে ইংল্যান্ড

ক্রিকেটের জনক ইংলিশদের সাথে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলার সুযোগ আসে টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির ঠিক তিন বছর পর।

আগের ম্যাচেই মুলতানে নিজেদের প্রথম জয়ের খুব কাছ থেকে ফেরত এসেছিল টাইগাররা। সে ম্যাচ পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত জিতেছিল ১ উইকেটে।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই ম্যাচেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি তাতে।

নবম দেশ হিসেবে ইংলিশদের বিপক্ষেও পরাজিত দলের নাম হয় বাংলাদেশ।

 
নিজেদের ৩য় টেস্টেই ২য় জয় পেল আফগানিস্তাননিজেদের ৩য় টেস্টেই ২য় জয় পেল আফগানিস্তান

সবশেষে আফগানিস্তান

আগের নয়টি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ হেরেছিল টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির একেবারে তিন বছরের মধ্যেই।

সে সময় র‍্যাঙ্কিংয়েরও তলানিতে থাকতো টাইগাররা। তাই অভিজ্ঞতাহীন নতুন দল বাংলাদেশের পরাজয় খুব একটা অবাক করেনি কাউকেই।

কিন্তু ২০১৭ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের যখন প্রথম দেখা ততদিনে সাদা পোশাকে ১৯ বছর পার করে ফেলেছে বাংলাদেশ।

আর র‍্যাঙ্কিংয়েও প্রথমবারের মতো উপরে থেকে কোন দলের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নামে টাইগাররা।

 
টেস্টে ১৯ বছর পার করেও এখনো এই ফরম্যাটে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি বাংলাদেশটেস্টে ১৯ বছর পার করেও এখনো এই ফরম্যাটে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি বাংলাদেশ

কিন্তু ২২৪ রানের হার শেষ পর্যন্ত এই অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড উপহার দেয় টাইগারদের।

আর কোন দলকেই যে টেস্টে ১০টি ভিন্ন দলের বিপক্ষে হারতে হয়নি। প্রথম দেখায় তো নয়ই।

তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে জিম্বাবুয়ে এখনো পর্যন্ত দুই নতুন টেস্ট সদস্য আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয়নি।

টেস্ট দলজয়পরাজয়
ইংল্যান্ড১০ দলের বিপক্ষে (এখনো আফগানিস্তানের সাথে খেলেনি)৮ দলের কাছে (জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ড বাদে)
অস্ট্রেলিয়া৯ দলের বিপক্ষে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলেনি)৮ দলের কাছে (জিম্বাবুয়ে বাদে)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ৯ দলের বিপক্ষে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলেনি)৮ দলের কাছে (জিম্বাবুয়ে বাদে)
পাকিস্তান১০ দলের বিপক্ষে ( এখনো আফগানিস্তানের সাথে খেলেনি)৮ দলের কাছে (বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড বাদে)
ভারত১০ দলের বিপক্ষে (এখনো আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলেনি)৮ দলের কাছে (বাংলাদেশ-আফগানিস্তান বাদে)
দক্ষিণ আফ্রিকা৯ দলের বিপক্ষে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলেনি)৭ দলের কাছে (জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ বাদে)
নিউজিল্যান্ড৯ দলের বিপক্ষে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলেনি)৭ দলের কাছে (জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ বাদে)
শ্রীলঙ্কা৯ দলের বিপক্ষে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলেনি)৮ দলের কাছে (জিম্বাবুয়ে বাদে)
জিম্বাবুয়েপাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের বিপক্ষে৯ দলের কাছে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলেনি)
বাংলাদেশজিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে১০ দলের কাছে (আয়ারল্যান্ডের সাথে এখনো খেলেনি)
আফগানিস্তানআয়ারল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিপক্ষেভারতের কাছে
আয়ারল্যান্ডনেইপাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের কাছে

তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরেই তাঁদের অবস্থান। অর্থাৎ জিম্বাবুয়ে এখন পর্যন্ত হেরেছে মোট নয়টি দলের বিপক্ষে। আর জিতেছে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ এই তিন দলের বিপক্ষে।

তবে বাংলাদেশে জিতেছে জিম্বাবুয়ের চেয়ে বেশি মোট পাঁচটি দলের বিপক্ষে। দলগুলো হল-জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া।

 
বাংলাদেশে সবগুলো প্রতিপক্ষের সাথে হেরেছে আর জিতেছে পাঁচ প্রতিপক্ষের বিপক্ষেবাংলাদেশে সবগুলো প্রতিপক্ষের সাথে হেরেছে আর জিতেছে পাঁচ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে

এদিকে সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই টেস্ট জয়ের রেকর্ড এখন ২০ বছর বয়সী রশিদ খানের।

আর সবচেয়ে দ্রুততম দুটি টেস্ট জয়ের রেকর্ডেও অস্ট্রেলিয়ার পাশে নাম লিখিয়েছে আফগানিস্তান। অজিদের মতো তাঁরাও নিজেদের ৩য় টেস্টেই ২য় জয় তুলে নিলো।

যেখানে বাংলাদেশের দুটি টেস্ট জিততে ম্যাচের হিসেবে লেগেছে সবচেয়ে ষাট ম্যাচ।