বাংলাদেশের ভিতরে এসে আটক জেলেকে ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে গুলি চালায় বিএসএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তের পদ্মায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী জেলেকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ব্যর্থ হয়ে তারাই প্রথম বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। জবাবে বিজিবি সদস্যরা পাল্টাগুলি চালালে এক বিএসএফ জওয়ান নিহত হয় বলে দাবি করেছে বিএসএফ। আহত হয় আরেক জন।

Image may contain: 1 person, close-up

এর আগে ওই জেলেকে ছিনিয়ে নিতে বিএসএফের একটি সশস্ত্র টহল দল চারঘাট বিওপির সীমান্ত পিলার ৭৫/৩-এস হতে ৫০০ মিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শাহরিয়ার খাল এলাকায় অনুপ্রকবেশ করে।

মা ইলিশ রক্ষায় পদ্মা নদীতে চালানো মৎস্য বিভাগ ও বিজিবির অভিযানে আটকা পড়েন ভারতীয় জেলে প্রণব মণ্ডল। তার কাছ থেকে অবৈধ কারেন্ট জালও উদ্ধার করা হয়। তবে প্রণব মণ্ডলের সঙ্গে পদ্মায় নামা আরও দুই জেলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

Image may contain: 1 person, sitting

আটক প্রণব মণ্ডল মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার সাহেবনগর ছিঁড়াচর এলাকার বসন্ত মণ্ডলের ছেলে। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশসহ দুইটি মামলা দায়ের করেছে বিজিবি। অপর মামলায় বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে নিষিদ্ধ সময়ে কারেন্ট জাল দিয়ে মা ইলিশ শিকারের অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে তাকে চারঘাট মডেল থানার মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

এদিকে, চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রজণন মৌসুমের জন্য এখন নদীতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ অবস্থায় জেলেরা যেন নদীতে ইলিশ শিকার করতে না পারে সে জন্য বিজিবি সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নদীতে অভিযানে যান। তারা দেখেন, পদ্মা-বড়ালের মোহনায় বাংলাদেশের সীমানার ভেতর একটি নৌকায় করে তিনজন ভারতীয় জেলে ইলিশ শিকার করছেন।

আটক জেলেকে ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে গুলি চালায় বিএসএফ

তারা গিয়ে তাদের আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় দুইজন পালিয়ে যান। আর একজনকে আটক করা সম্ভব হয়। এ সময় পালিয়ে যাওয়া জেলেরা গিয়ে বিএসএফকে বিষয়টি অবহিত করে। বিএসএফ সদস্যরা এসেই গালাগালি শুরু করেন। বিজিবি এর প্রতিবাদ করলে তারা গুলি ছোঁড়ে। তখন বিজিবির পক্ষ থেকেও গুলি ছোঁড়া হয়। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা পিঁছু হটেন।

রাজশাহী-১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে চারঘাট বিওপির সীমান্ত পিলার ৭৫/৩-এস হতে ৫০০ মিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে শাহরিয়ার খাল এলাকার পদ্মা নদীতে তিনজন ভারতীয় জেলেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়।

ওই সময় মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করছিল বিজিবি। তিন জেলেকে আটক করার চেষ্টা করলে দুজন পালিয়ে যায়। তবে এক ভারতীয় জেলেকে জালসহ আটক করে পদ্মার এপারে নিয়ে আসে বিজিবি।

এর কিছুক্ষণ পর ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারী ক্যাম্পের চার সদস্য স্পিডবোটযোগে অবৈধভাবে শূন্যরেখা পেরিয়ে ৬০০-৬৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। নদীর এপারে বিজিবি টহল দলের কাছে এসে আটক জেলেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ সদস্যরা।

Image may contain: 3 people

ওই সময় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আটক জেলেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের কথা জানায় বিজিবি। এক পর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা ওই জেলেকে মারধর করে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। বিজিবি সদস্যরা তাদের বাধা দিলে বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে ৬ থেকে ৮ রাউন্ড ফায়ার করে বিএসএফ। আত্মরক্ষায় বিজিবি সদস্যরা পাল্টা ফায়ার করলে বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে করতে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে।

বিজিবি আরও জানায়, এই ঘটনায় বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পদ্মা নদীর চর শাহরিয়ার বাঁধে বিজিবি-বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় বিএসএফ কমান্ড্যান্ট দাবি করেন, তাদের একজন সদস্য নিহত এবং একজন সদস্য আহত হয়েছেন।

উভয়পক্ষ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে একমত হন। এছাড়াও এ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য খুব শিগগিরই পতাকা বৈঠক করার বিষয়ে একমত হন।