বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের মহানুভতায় কৃত্রিম ‘পা’ পাচ্ছে রাজশাহীর সোনিয়া 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের শীর্ষস্থানীয় বৃহত্তম শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের মহানুভতায় পা সংযোজন হতে যাচ্ছে- রাজশাহীর সোনিয়া খাতুনের। মঙ্গলবার (১৯ মে) বেলা ১২টার দিকে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তার হাতে নগদ একলাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাকে ও তার পরিবারকে রমজান ও ঈদের উপহার হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেটও তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল, আটা, সুজি, সেমাই, নুডুলস, পাস্তা ইত্যাদি ছিল।
গ্রুপের চেয়ারম্যানের পক্ষে আর্থিক অনুদান ও উপহার হিসেবে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন- বসুন্ধরা গ্রুপের রাজশাহী ডিভিশনের সেলস ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন ভুঁইয়া, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের টেরিটরি সেলস এক্সিকিউটিভ আবরার শাহরিয়ার ও সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ রফিকুল ইসলাম।
এ সময় কৃত্রিম পা সংযোজনের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের আর্থিক অনুদান পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন- শারীক প্রতিবন্ধী কলেজছাত্রী সোনিয়া খাতুন। মুহূর্তেই তার চোখ ভেজে ওঠে। এ সময় তিনি ও তার পরিবার বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সোনিয়া থাতুন এ সময় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দীর্ঘায়ু কামনা করে বলেন- ‘তার এই অনুদান আমার জীবনের পথ চলার অনেকে বড় সহায়ক হলো। চিকিৎসকরা আমার কৃত্রিম পা সংযোজনের জন্য সর্বসাকূল্যে একলাখ টাকা লাগবে বলে জানিয়েছিলেন। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয় এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও পুরো টাকাই আমার জন্য ঢাকা থেকে রাজশাহী পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই একলাখ টাকা দিয়ে এখন তিনি তার শরীরে একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করতে পারবেন। যা আমার বেঁচে থাকার সংগ্রামী পথকে আরও সুগম করবে। আমি দোয়া করি আল্লাহ বুসন্ধুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়কে সব সময় সুস্থ রাখুন ও দীর্ঘজীবী করুন।’
আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়ার পর বুসন্ধরা গ্রুপের রাজশাহী ডিভিশনের সেলস ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন ভুঁইয়া বলেন, পত্রিকার পাতায় সোনিয়া খাতুনে জীবন চলার নির্মমতা চোখে পড়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের। পরে তার নির্দেশে মহানগরীর হাদিরমোড় এলাকার বস্তিতে গিয়ে আজ তারা সোনিয়া খাতুনের হাতে অর্থিক অনুদান তুলে দিলেন। এ সময় রমজান ও ঈদের উপহার হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের উৎপাদিত বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেটও তুলে দেওয়া হয়েছে।
সোনিয়া খাতুনের জীবন সংগ্রাম আর দশজন মানুষের মত নয়। মাত্র দুই বছর বয়সে ট্রেনে কাটা পড়েন। ওই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যায় মেয়েটি। তবে হারাতে হয় একটি পা। পাঁচ কিলোমিটার পথ এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়েই স্কুলে যাওয়া-আসা করে মেয়েটি। এখন তিনি উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী।
সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ও পড়াশােনা চালাতে তিন মাস আগে চাকরির আশ্বাসে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলেন রাজশাহী শহরে। সেখানে থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাতে মা হােটেলে কাজ নেন।
কিন্তু মেয়েটির চাকরিতে যােগদানের ঠিক পাঁচদিন আগেই করােনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় সব। মা-মেয়ে ও বাবা এখন আটকা পড়ে আছেন রাজশাহী শহরের হাদিরমোড় বস্তির বাসায়। সংগ্রামী সােনিয়া খাতুনের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার পূর্ব ধােপাপাড়া গ্রামে। বাবা
মজিবুর রহমান মানসিক প্রতিবন্ধী। মা রহিমা বেগম গ্রামে মানুষের বাড়িতে একবেলা কাজ করতেন, আরেক বেলা মাঠে কাজ করতেন। সােনিয়া ধােপাপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। এখন পুঠিয়া লস্করপুর মহাবিদ্যানিকেতন কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী।
এর আগে স্কুলে পড়ার সময় একটি প্রতিষ্ঠান তাকে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বড় হয়ে যাওয়ায় সেই পা আর এখন কাজে আসেনা সোনিয়া খাতুনের। বসুন্ধরার আর্থিক অনুদানে এবার নতুনভাবে কৃত্রিম ‘পা’ সংযোজন করতে পারবেন- রাজশাহীর সোনিয়া।
স/আর