বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির অভাবে আমন ধানের জমি ফেটে চৌচির, হতাশায় কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ভরা বর্ষা মৌসুমেও এবার কাঙ্খিত বৃষ্টি হয়নি। এতে বরেন্দ্র অঞ্চল নামে খ্যাত  রাজশাহী ও উত্তরাঞ্চলের আমন ধান রোপন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। যারা আমন ধান রোপন করেছেন পানি সেচ দিতে না পেরে সেসব আমনের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে রোপনকৃত ধান। আবার যারা আমন এখনো রোপন করেনি তাদের আমনের চারা বীজ তলাতেই নষ্ট হচ্ছে।

অব্যাহত খরার কারণে কৃষি ভান্ডার ধান উৎপাদনের বিখ্যাত এলাকা রাজশাহীর তানোরে রোপনকৃত রোপা আমন ধানের  ক্ষেতে নেই পানি, জমি ফেটে চৌচির, বৃষ্টির পানির দেখা নেই প্রায় ১৫ দিন ধরে। একারণে জমির অবস্থা নাজেহাল, অপারেটরেরা দিচ্ছেন না সেচ।

কয়েকদিন এভাবে চলতে থাকলে ধান গাছের কচি পাতা পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন উপজেলার কৃষকরা। আবার সেচ পেতে হয়রানির শেষ নেই। রোপা আপন চাষাবাদ উপজেলা বাসীর মুল ভরসা। সেই ভরসায় গুড়ে বালি পড়ছে পানির অভাবে। অথচ সরকারী পর্যাপ্ত সেচ পাম্প থাকলেও বিএমডিএর তিল পরিমান ভূমিকা নেই। যে ভাবেই হোক সেচের ব্যবস্থা করতে না পারলে পথে বসবে কৃষকরা,ব্যহত হবে উৎপাদন,খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে এঅঞ্চল বলে মনে করছেন কৃষি বিদরা ।

আবার রোপনকৃত জমিতে আগাছা ভরে গেছে। ফলে একদিকে হয়নি জমি রোপন অপর দিকে আগাছা এবং মরা ধান গাছে নতুন বীজ দিয়ে গোজা মারা লাগছে। এতে করে চরম হতাশায় ভূগছেন কৃষকরা। জানা গেছে, বৃষ্টির পানি নির্ভর রোপা আমন চাষাবাদ। উপজেলার উঁচু নিচু সকল জমিতে হয় চাষ। কিন্তু জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবের কারণে বিগত ১৫ দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই।

যার কারণে প্রায় ৫/৬ হাজার হেক্টর জমি এখনো রোপন হয়নি। বিশেষ করে বাঁধাইড় ইউপিতে চারভাগের তিন ভাগ জমি পতিত পড়ে আছে। খাড়িকুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর জানান ৬ বিঘা রোপন করতে পারেনি, ১৫ দিন আগে বা ১৪ জুলাই শুক্রবারে ভারি বর্ষনের জমিগুলো চাষ দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু সেই চাষকৃত জমিতে পানি না পাওয়ার কারনে শুকনো হয়ে পড়েছে, যদিও বৃষ্টি হয় পুনরায় নতুন ভাবে চাষ করতে হবে। আর জমি রোপন করতে না পারলে পথে বসতে হবে। শুধু আমার না প্রায় কৃষকের একই অবস্থা। সবার আকাশ মানে চেয়ে আছে কখন নামবে রহমতের বৃষ্টি। নারায়নপুর গ্রামের হেনা ১৫ কাঠা জমি রোপন হয়নি।

নারায়নপুর সল্লাপাড়া গ্রামের আহাদ জানান, ২ বিঘা জমি চাষ করে রেখে পানির অভাবে রোপন হয়নি। একই এলাকার দুরুল জানান সুকেনের ১৪ বিঘাসহ নারায়নপুর, একান্নপুর ও তেতলা মৌজায় নিম্মে হলেও ৫০০ বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। সেচের জন্য গভীর নলকূপে পানি উঠছেনা, বৃষ্টির পানি না হলে কোনভাবেই রোপন সম্ভব হবে না। গুবিরপাড়গ্রামের কৃষক মনির জানান ১২ কাঠা জমি রোপন করা হয়েছে ২০/২২ দিন আগে পানি না থাকায় ফেটে গেছে একাধিকবার বলার পরও সেচ দিচ্ছে না। সিরিয়াল অনুযায়ী সেচ নিতে হবে। আর দু এক দিন হলে ধান গাছের কচি পাতা মরে যাবে। এন্তাজের আড়াই বিঘা, কাশিমের ১ বিঘাসহ প্রায় কৃষকের একই অবস্থা। মনির আরো জানান গাইনপাড়া গ্রামের পশ্চিমে ৩ বিঘা জমি ফেটে চৌচির, সেচ দিচ্ছে না অপারেটর। ওই মাঠে সব জমির অবস্থা মারাত্মক। অনেকের ধান গাছের কচি পাতা মারা গেছে। পাঁচন্দর ইউপির চিমনা গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, ৪০ বিঘা জমি রোপনের পর তেমন ভাবে পানি পায়নি।

গত ১৪ জুলাই শুক্রবার হয়েছিল বৃষ্টির পানি তারপর থেকে দেখা মিলেনি। ধানগাছের বয়স ২৪/২৬ দিন হবে। পানি না থাকার কারনে আগাছায় ভরে গেছে। তিনি আরো জানান একই গ্রামের রবিউলের ১০ বিঘা,গাল্লা গ্রামের সাফিউলের ৩ বিঘা জমির অবস্থা খুবই খারাপ। যশপুর তোফাজ্জুল জানান, ১৫ বিঘা জমি রোপন করা হয়েছে, পানি পাওয়া যাচ্ছেনা, আগাছার কারনে ধানগাছের কচি পাতা বোঝাই যাচ্ছেনা। ইলামদহী গোবিনপুর গ্রামের রমজান জানান ৫ বিঘা জমি রোপন করে অনেক ধানগাছ মারা গেছে সে সবে নতুন বীজ গোজা দেয়া লাগছে। সুত্র মতে, উপজেলায় মোট আবাদ যোগ্য জমি আছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, সেচের আওতায় জমি রয়েছে ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর। সেচ বহির্ভূত জমি আছে ১ হাজার ৬৬১ হেক্টর, এক ফসলী জমি রয়েছে ৩৪৪ হেক্টর, দুই ফসলী জমি রয়েছে ৪ হাজার ৫৪০ হেক্টর, তিন ফসলী জমি রয়েছে ১৯ হাজার ১০৯ হেক্টর।

বিএমডিএ সুত্র জানায়, উপজেলায় গভীর নলকূপ সরকারী ৫৩৬ টি মালিকানা ১৬ টি মোট ৫৫২ টি, অগভীর মটর বিদ্যুৎ চালিত ৪১১ টি, ডিজেল চালিত ৫০ টি এলএলপি (বিদ্যুৎ) ৩ টি, এলএলপি (ডিজেল চালিত) ৩৫০ টি, সরকারী মোট সেচ যন্ত্র ১৩৬৬ টি ও মালিকানা ৮৩০ টি। সব মিলে সেচ যন্ত্র ২১৯৫ টি। উপজেলায় আবাদ যোগ্য জমি আছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, সেচের আওতায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর।

গভীর নলকূপের অপারেটরা সঠিক ভাবে সেচ দিচ্ছেনা কেন জানতে বিএমডির সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, এবারে রোপা আমনের লক্ষমাত্রা ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে রোপন হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরের বেশি। বাকি জমি বৃষ্টির পানির জন্য রোপন হয়নি। তবে এখনো রোপনের সময় আছে, আসা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমি রোপন হবে। বৃষ্টি না হলে সেচের মাধ্যমে রোপনের ব্যবস্থা করা হবে।