বন্ধের উপক্রম দেশের সাড়ে ১০ হাজার কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে করুণদশা দেশের বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিউটসহ সাড়ে ১০ হাজার কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতনভাতা পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে। রোজার শুরুতেই এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ায় সংশ্লিষ্টরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ও করোনাভাইরাসে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবেলায় ৩৯০ কোটি টাকার প্রণোদনা চান বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা খাতের উদ্যোক্তারা। এ লক্ষ্যে গত ২৩ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি)’।

সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রে ‘কারিগরি ইন্সটিটিউট প্রণোদনা প্যাকেজ’ চেয়ে আবেদন করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ বলেন, বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো বেতন-ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি কোনো অনুদান বা আর্থিক সহযোগিতা পায় না। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার পর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত ও অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই অর্থনৈতিকভাবে বড় সংকটের মধ্যে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা নাজুক অবস্থার শিকার। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা ছাড়া পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ খুবই কঠিন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের শিক্ষার অগ্রাধিকার খাতের অন্যতম কারিগরি শিক্ষা। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এই কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য আমরা অন্যান্য খাতের মতো প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি।

আবেদনে বলা হয়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কারণে অর্থনৈতিক দুর্বলতার শিকার। এ প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত বেতন দিয়েই প্রতিষ্ঠানের ভবন ভাড়া, সব ইউটিলিটি বিল, শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সত্ত্বেও দুর্যোগকালীন সময়ে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফিসহ অন্যান্য পাওনা আদায় করছে না। এতে করে সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিক মহাসঙ্কটে পড়েছে এবং যার প্রভাব পড়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ওপর।

আবেদনে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন সেক্টর ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক প্রণোদনা এবং সহযোগিতার প্রশংসা করে বলা হয়, বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩৯০ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করা যেতে পারে, যাতে কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ বছর মেয়াদি (প্রথম বছর গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে বিবেচনা করে) ২ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

আবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ১০ হাজার ৪৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ৯ হাজার ৭৫৯টি, যেখানে সরকারি সংখ্যা মাত্র ৬৯৩টি। এসব শিক্ষাক্রমে ২০১৮-১৯ সেশন রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ২১ হাজার ৭৯ জন।