বনলতার খাবারে অনাগ্রহ: যাত্রী হারাচ্ছে শোভন চেয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী থেকে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি এখন শুক্রবার বাদে সকাল ৭টায় ছেড়ে যাচ্ছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। এটি বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে। ঢাকা থেকে ছাড়ছে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে। এরপর রাজশাহী পৌঁছাচ্ছে সন্ধ্যা ৬টায়।

প্রতিদিন এই ট্রেনের শোভন চেয়ারের সাতটি বগির মধ্যে অধিকাংশ বগিই থাকছে অর্ধেক যাত্রী। মানে শোভন চেয়ারে আগ্রহ নাই যাত্রীদের। কিন্তু এসি বগিতে ৮ দিন আগেই টিকিট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, শোভন চেয়ারের বগি এবং আসন সংখ্যা দ্বিগুন হলেও খাবারের দাম যুক্ত করে দেওয়ায় যাত্রী হারাতে হচ্ছে। যাত্রীরা শোভন চেয়ারের খাবারের দামসহ অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে যেতে চাইছেন না এ ট্রেনে। কিন্তু ৭টা ৩০ মিনিটে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া সিল্কসিটি ট্রেনে ঠিকই যাত্রীসংখ্যা হচ্ছে আগের মতোই। অধিকাংশ সময় এ ট্রেনে টিকিটই দিতে পারছেন না রেল কর্তৃপক্ষ।

ফলে বিরতিহীন ট্রেনে একমাত্র এসি বগি ছাড়া শোভন চেয়ারের বগিতে প্রতিদিনই আসন ফাঁকা থাকছে। এতে রেলওয়ের লোকসান ছাড়া লাভের পরিমাণ কম হবেই বলে মনে করছেন যাত্রীরা। এর পেছনে হয়তো কোনো চক্র কাজ করছে কিনা সেটি নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছেন অনেকেই।

বনলতার এসির টিকিট নিতে মঙ্গলবার রাতে যাত্রীদের ভিড় রাজশাহী স্টেশনে। ছবি-সিল্কসিটিনিউজ

 

বনলতা ট্রেনের যাত্রী আকবর আলী বলছিলেন, এতো ঢাকঢোল পিটিয়ে যে বিরতিহীন ট্রেন আনা হলো, সেটিতে সাধারণ মানুষের কোনো উপকারে আসছে না। সাধারণ মানুষকে বরং জিম্মি করে টাকা আদায়ের ফন্দি আটা হয়েছে। টিকিটের মূল্যের সঙ্গে খাবারের মুল্য ১৫০ টাকা জুড়ে দিয়ে করা হয়েছে ৫২৫ টাকা। অথচ সিল্কসিটি, পদ্মা বা ধূমকেতু ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া হলো ৩৪০ টাকা। এ কারণে মানুষ বনলতায় এক ঘন্টা সময় আগে না গিয়ে ওসব ট্রেনেই ঝুঁকছে এখনো। এর সঙ্গে রেলওয়ের কোনো চক্র জড়িত আছে বলেও মন্তব্য করেন ওই যাত্রী।

আরেক যাত্রী বলেন, শোভন চেয়ারে না গিয়ে যাত্রীরা যেন বাসে যায় এ কারণেই এমন পন্দি আটা হয়েছে। একসময় লোকসান দিতে দিতে যেন ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বাসমালিকদের পোয়া বারো হবে, সেটিরও হয়তো চক্রান্ত চলছে। এ কারণেই শোভন চেয়ারের এতো বেশি ভাড়া করা হয়েছে। খাবারের যে মান তাতে কখনোই ১৫০ টাকা হওয়ার কথা নয়। আবার ১৫০ টাকা দিয়ে সাধারণ মানুষ এক বেলা পেট পুরে খেতে পারবে। তার চেয়ে অন্য ট্রেনগুলোর দিকেই ঝুঁকছেন যাত্রীরা।’

এদিকে জানা গেছে, বনলতা এক্সপ্রেসে আছে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা ১২টি নতুন বগি। অত্যাধুনিক এ ট্রেনে শোভন চেয়ারের বগি ৭টি। যার আসন সংখ্যা ৬৬৪টি। এসি বগি ২টি। যার আসন সংখ্যা ১৬০টি। একটি পাওয়ার কারের আসন সংখ্যা ১৬টি। দুটি গার্ডব্রেকের আসন সংখ্যা ১০৮টি। সবমিলিয়ে বনলতায় মোট আসন থাকছে ৯৪৮টি।

গত ২৫ এপ্রিল থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টার ও অনলাইন থেকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে এ ট্রেনের।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনডেন্ট আমজাদ হোসেন জানান, সবার চোখ এসি চেয়ারের টিকিটের দিকে। কিন্তু শোভন চেয়ারের টিকিট খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে প্রায় সব ট্রেনেই আসন ফাঁকা থাকছে। তিনি জানান, আগামী ৫ মে পর্যন্ত এসির কোনো টিকিট নাই। কিন্তু বৃহস্পতিবারের শোভন চেয়ারের টিকিও আছে। এমনকি আজ বুধবার সকালেও বেশকিছু আসন ফাঁকা গেছে।

তিনি বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন বনলতার টিকিট খাবার মূল্য ১৫০ টাকাসহ শোভন চেয়ার ৫২৫ টাকা এবং এসি (স্নিগ্ধা) চেয়ারের টিকিটের মূল্য ৮৭৫ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

স/আর