বদলে যাওয়া রাজশাহীর ভূয়সী প্রসংশা করলেন আ.লীগ নেতারা

রফিকুল ইসলাম

তখন সকাল সাড়ে সাতটা। রাজশাহী নগরীর আকাশে তখনো ঠিকঠাক মতো ওঠেনি সূর্য। ফলে প্রকৃতিতে তখনো শীতের দাপট অনেকটায় বিরাজ করতে থাকে। বলা যায় মাঘের কনকনে শীত বিরাজ করছে রাজশাহীতে। এর মধ্যেই তেরোখাদিয়া রাস্তা দিয়ে মাদ্রাসা মাঠের দিকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে যেতে থাকে একটি মিছিল। সবার গায়ে সবুজ রঙ্গের টি সার্ট। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইএম খায়রুজ্জামান লিটনের সৌজনে লিখা টি-সার্ট পরে প্রায় হাজার দেড়েক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে মিছিলটি গিয়ে শেষ হয় নগরীর ফায়ার সার্ভিস মোড়ের ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে। এর কিছুক্ষণ পরেই আরকেটি মিছিল আসতে থাকে উত্তর দিক থেকে। হলুদা টি-সার্ট পড়ে ৫-৬শ নেতাকর্মীর মিছিলটিও গিয়ে শেষ হয় মাদ্রাসা মাঠের সামনে। এর পর নেতাকর্মীরা নিরাপত্তা বেস্টনি পার হয়ে ঢুকতে শুরু করেন মাদ্রাসা মাঠের ভিতরে। রাজশাহী সকাল সাড়ে আটটার দিকেই মাঠের একটি অংশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ভরে যায়। অন্যদিকে মাঠে বাইরে তখন একের পর এক আসতে থাকে মিছিল।

default

এভাবে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই লাখো নেতাকর্মীর ভিড়ে নগরীর ফায়ার সার্ভিস মোড় ও পাঠানাপাড়া মোড় জনস্রোতে পরিণত হয়। এই জনস্রোতের একটি অংশ সকাল ১১টার মধ্যে ঢুকে পড়ে মাদ্রাসা মাঠের ভিতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা¯থলে। আর ১১টার পরে যেসব মিছিল বা নেতাকর্মী জনসভাস্থলের দিকে যাওয়ার জন্য আসেন, তারা আর ঢুকতে পারনেনি অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে। ফলে তারা রাস্তায় অবস্থান করতে থাকেন। তখণ পুরো মাঠে লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। যেন তীল ধারণের ঠাঁই ছিল না কোথাও। জনস্রোতের কারণে মিডিয়াকর্মীদের বসার জন্য বেগ পেতে হয়। অপর দিকে মাঠের বাইরেও বাড়তে থাকে ভীড়। শেষ পর্যন্ত নগরীর ঘোষপাড়া মোড়, জাদুঘর মোড় পর্যন্ত ঠেকে যায় জনস্রোত। অনেকেই জিরোপয়েন্টেও অবস্থান নিয়ে বড় পর্দায় দেখতে থাকেন জনসভার সার্বিক কার্যক্রম।

জানতে চাইলে নওগাঁর পোরশা থেকে আসা আওয়ামী লীগ সমর্থক দিদারুল ইসলাম বলেন,‘অনেকদিন পরে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী অঞ্চলে সফরে আসছেন। তিনি এই অঞ্চলের অনেক উন্নয়ন করেছেন। রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে সবখানেই পড়েছে তাঁর উন্নয়নের ছোঁয়া। তাই তাকে এক নজর দেখতে ছুটে এসেছি শীত উপেক্ষা করে। আমরা যখন বাড়ি থেকে বের হয়, তখন ভোর ৫টা বাজে। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে আমরা কয়েকশ নেতাকর্মী রাজশাহীতে এসে পৌঁছেছি। শীতে আসতে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু জনসভাস্থলে আসার পর সব কষ্ট ভুলে গেছি।’

বাঘার বাজুবাঘা থেকে আসা আওয়ামী লীগ কর্মী আকবর হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কারণে রাজশাহী শহরটাতে যেন উন্নয়ন হয়েছে, সেটি দেখার মতো। এভাবে তিনি সারা দেশের উন্নয়ন করেছেন। আমরা আগামীতে তাকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চাই। তাই জনসভাকে সফল করতে এসেছি।

default

উন্নয়নে বদলে যাওয়া রাজশাহী নগরীর চিত্র দেখে জনসভায় আগত শুধু আকবর আলী নন, তাঁর মতো আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও প্রসংশা করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের হুইপ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়াসহ আরও অনেক নেতাকর্মী উন্নয়নে রাজশাহী নগরীকে বদলে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মেয়র এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামন লিটনের ভূয়সী প্রসংশা করেন।

এদিকে রবিবার সকাল থেকে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ সমাবেশস্থলে যাওয়ার রাস্তায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরভীড় দেখা যায়। রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলা থেকে এসব নেতাকর্মীরা ট্রেন, বাসযোগে নগরীতে আসেন। এসময় তাদের শরীরে বিভিন্ন নেতার লোগো ছাপানো গেঞ্জি পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসব কর্মীরা নেতাদের দেয়া স্লোগানের সঙ্গে তাল মিলাতে মিলাতে সমাবেশস্থলের দিকে যেতে থাকে। রোববার সকাল ৮টায় সমাবেশস্থল মাঠের ফটক খুলে দেওয়া হয় এবং সকাল ৯টা থেকে জনসভাগম বাড়তে থাকে। পরে ১১টায় ৫০ মিনিটে পবিত্রধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে জনসভার মূল মঞ্চের পাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা। শুরুতে মঞ্চে স্থানীয় নেতারা বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্য দেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলসোয়া ৩টায় মহানগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের মঞ্চে এসে পৌাঁছান। এরপর তিনি ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর ও ফলক উন্মোচন করেন। বক্তব্য রাখেনআওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় সংসদের হুইপ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহী বিভাগের আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমূখ।

জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী কামাল এবং সঞ্চালনা করছেন, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা।

স/আর