বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহীর২৫ বছরঃ মুজিববর্ষেই সরকারি হোক

মোঃ কামরুজ্জামান, উপাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহী

২৫ বছর পূর্তিতে বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহীকে নিয়ে দুটি লাইন লেখার খুব লোভ হচ্ছেকিন্তু লিখতে বসে ভ্যাবাচাকায় পড়লাম! ২৫ বছরের স্মৃতি! কি লিখব? ভালবাসা, ভালো লাগা? গোপন সহযোগিতা?মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়তে শিক্ষক কর্মচারীদের লড়াই? অর্থের যোগান? দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠান করার সাহসিকতার কথা? প্রতিষ্ঠাতাগণের কথা?

নাকি! অপমান,অবহেলা,শিক্ষার্থী না পাওয়া, বার বার স্বপ্ন ভঙ্গের কেচ্ছা,সবার ৬ তলা ভবন আর আমাদের ৪ তলা ভবনের কথা, জমি না পাওয়া, প্রাপ্তির শেষ তালিকায় নাম থেকে অবশেষে অপ্রাপ্তির পাল্লা ভারীর কথা?

নাকি! সব ভবন আকাশ ছোঁয় আর সেই ছোঁয়ায় বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহী ঢেকে পড়ার কথা!

নাহ্! বঙ্গবন্ধুতো ভালোবাসা ছড়িয়েছেন, মানবিকতা বিলিয়েছেন, লক্ষ্যে অটুট থেকেছেন, বাঙালির ঐতিহ্যের পথে চলেছেন। তাহলে শিক্ষায় বঙ্গবন্ধু কলেজ ক্রমশ মহিরূহে পরিণত হবার দু একটি কথা লেখায় উত্তম।

লেখার শুরুতেই জন্মশত বার্ষিকীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করি ৩০ লক্ষ শহীদ, সম্ভ্রমহারা সাড়ে চার লক্ষ মা-বোন সহ যাদের লড়াই, সংগ্রাম, ত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা, তাদের সবাইকে।

এক বিরুদ্ধ সময়ে ১৯৯৪ সনে শুরু হলেও নানান প্রতিকূলতা ও ঘেরাটোপে পিছিয়ে পড়ে ১৯৯৫ সনে বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহী প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠায় অনেকেই জড়িত থাকলেও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড.আব্দুল খালেক, প্রফেসর ড. কায়েস উদ্দিন, সদ্য প্রয়াত প্রফেসর ড.আতফুল হাই শিবলি,প্রয়াত অধ্যক্ষ প্রফেসর বেলায়েত হোসেন, প্রয়াত শামসুল হক কোরাইশী, রাজনীতিবিদ এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (মাননীয় মেয়র, রাসিক), রাকসুর সাবেক ভিপিনূরুল ইসলাম ঠান্ডু, আব্দুর রাজ্জাক (প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ), সমাজ কর্মী প্রয়াত নেছার আহমেদ এর নাম উল্লেখ না করলেই নয়। আর শিক্ষক-কর্মচারীগণ তো ছিলেনই। তাদের নিরবচ্ছিন্ন শ্রম কৃতজ্ঞতার দাবী রাখে।

আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েই কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। মাননীয় নেত্রীর প্রতি আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতা। আরো কৃতজ্ঞতা জানাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ – কে। যার ঐকান্তিক সহযোগিতায়, অংশগ্রহণ ও নির্দেশনায় শিক্ষা কার্যক্রমসুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে এইচএসসি, স্নাতক (পাস), ১১ টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু রয়েছে। স্নাতক (সম্মান) কোর্সে আরো কয়েকটি বিষয় এবং মাস্টার্স কোর্স চালুর অপেক্ষায় আছে প্রতিষ্ঠানটি। ২৭০০ জন শিক্ষার্থীর পদচারণায় ১৫টি ক্লাব কার্যক্রমে, খেলাধূলায়, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ডিবেট-আলোচনা-উৎসবে মুখর বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহী।আছে পরমত সহিষ্ণুতা চর্চার নানান খাত।কি নেই! সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলিতে আমরাই শীর্ষে, প্রযুক্তি নির্ভর ক্লাস পরিচালনাতেও আমরা অগ্রগণ্য। শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতি শনিবার জাতীয় সংগীতের সাথে শপথ নিতে হয়।

উত্তরবঙ্গে যেমন সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর নামে কলেজ এটি, তেমনি ২০১৬ সনে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কর্ণারও প্রথম প্রতিষ্ঠা হয় এই কলেজে। এটি শুধুমাত্র কথার কথা নয়। সেদিন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু কর্ণার উদ্বোধনের খবর প্রচারিত হয়েছিল। বাঙালির ঐতিহ্য পিঠা উৎসব আমাদের নিয়মিত আয়োজন। এই আয়োজন এখন সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে।সকল প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে আয়োজন করা হয় দেয়াল পত্রিকা উৎসবের। বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তঃকলেজ ১ম ফুটবল টুর্ণামেন্ট আয়োজন করেছি আমরা। এটিও কলেজ পর্যায়ে প্রথম কোন উদ্যোগ।

‘জীবনদক্ষতা পূর্ণ শিক্ষায় শ্বাশত মানবিকতা’শ্লোগানকে সমানে নিয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী,আত্মমর্যাদাবান,সৃজনশীল, কর্মপ্রত্যয়ী সুনাগরিক হিসেবে তৈরিতে শিক্ষকগণ নিবেদিত আছেন। ফলাফলের সামগ্রিকতার সাথে আমরাজীবনদক্ষতাকে যুক্ত করি। ফলে বিজ্ঞান মেলায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা জাতীয় পুরস্কার যেমন অর্জন করেছে, তেমনি জেলা থেকে জাতীয় পর্যায়ে নানামুখি প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে। বঙ্গবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থীরা‘স্বপ্নতরী ক্লাব’ করেযেমন মানুষের দূর্যোগের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তেমনি তাৎক্ষনিক রক্ত প্রদানে/সংগ্রহে তারা তৎপর।

বঙ্গবন্ধুর বিশালতাকে ধারণ করে এই কলেজটিও বিশাল হবে, গবেষণা করবে, জাতিকে পথ দেখাবে এটি আমাদের স্বপ্ন! কলেজটি আকারে ছোট কিন্তু কর্মকান্ডে বিশাল ও পথিকৃৎ। তবুও সময়ের সাথে তাল মেলাতে কি যেন নেই আমাদের! কোথায় যেন অতৃপ্তি? কোথায় জানি এক ধরণের ব্যর্থতা? সেই ব্যর্থতা ভবনের, শিক্ষা উপকরণের, ল্যাবের, গবেষণার, জায়গা-জমির, ফান্ডের, বৃত্তি প্রদানের।আছে ২৫ বছরেও সরকারিনা হবার আক্ষেপ! তাই সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অনুরোধ কলেজটিকে অচিরেই সরকারি করুন। ল্যাব দিন, জায়গা দিন। আমরা আপনাদের সুনাগরিক দিব, দেশপ্রেমিক নাগরিক দেব, উদ্যোক্তা দেব।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী, বাংলাদেশের ৫০ বছর অর্থাৎ সুবর্ণ জয়ন্তী আর বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহীর ২৫ বছর অর্থাৎ রজত জয়ন্তী। অদ্ভূত মিল! কাঙ্খিত সমীকরণ ১০০-৫০-২৫। এই অভাবনীয় সমীকরণের সর্বোত্তম স্মৃতি স্মারক হতে পারে বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহীকে সরকারীকরণ। তাই দাবী জানাই মুজিববর্ষেই বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহীকে সরকারি করা হোক।

২৫ বছর পূর্তিতে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই শিক্ষাবান্ধব সংসদ সদস্য জনাব ফজলে হোসেন বাদশাকে, কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করি গর্ভনিং বডির সকল সদস্য, শিক্ষা প্রশাসনের সকলকে, অভিভাবক, শুভ্যানুধায়ী, এলাকাবাসী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। যাদের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহী সমৃদ্ধতর অবস্থানে যাচ্ছে,তাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা। জয়বাংলা।

লেখকঃ মোঃ কামরুজ্জামান, উপাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহী