বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ধারা বর্ণনা দিতে ঢাকায় এসেছিলেন দেবদুলাল

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বীর বাঙালি। স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।

কিন্তু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনো পাকিস্তানের কারাগারে। ফলে স্বাধীনতা এলেও নেতার অনুপস্থিতিতে অপূর্ণতা থেকে গিয়েছিল বিজয়ের গৌরব।

অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখেন মুক্তির মহানায়ক।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখার সেই ঐতিহাসিক ঘটনার ধারা বর্ণনা দিতে ঢাকা তার দুদিন আগে (৮ জানুয়ারি ১৯৭২) ঢাকায় এসেছিলেন কলকাতা থেকে প্রচারিত আকাশ বাণীর প্রখ্যাত বাংলা খবর পাঠক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান স্বাধীন বাংলা বেতারের চরমপত্র পাঠক ও বাংলাদেশ সরকারের তথ্য বিভাগ প্রধান এমআর আখতার মুকুল, ঢাকার আকাশবাণী প্রতিনিধি সুজিত বাবু।

মুক্তিকামী বাংলাদেশিরা তাকে আখ্যায়িত করে ‘বাংলার দুলাল’ নামে। কারণ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিরা তার কণ্ঠ শোনার অপেক্ষায় থাকত।

দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা পৌঁছেই সরাসরি চলে যান শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে দেখতে, সেখানে তিনি বেগম মুজিবের পদধূলি নেন।

দেবদুলাল সাংবাদিকদের বলেন, বাঙালি জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং এ দেশের মানুষের আনন্দ উৎসব উদযাপনে শরিক হওয়ার জন্যই তিনি ঢাকা এসেছেন।

১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরেন। সেদিনই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায়। এ সময় তাকে জড়িয়ে ধরেন বঙ্গবন্ধু।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আকাশবাণীতে খবর পড়ার স্মৃতি মনে করে পরে এক সাক্ষাৎকারে দেবদুলাল বলেন, আকাশবাণীর খবর পড়তে গিয়ে মাঝেমধ্যে নিজেকে আর সংবরণ করতে পারিনি। মনে হতো, আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা।

সেদিন আমার বুকের ভেতরের সব লুকানো আবেগ আর উত্তেজনা ঢেলে দিয়েছিলাম আকাশবাণীর সংবাদ, সংবাদ-পরিক্রমা বা সংবাদ-সমীক্ষা পড়তে গিয়ে। রণাঙ্গনের খবর যখন পড়তাম, তখন মনে করতাম, আমিও সেই রণাঙ্গনের সৈনিক। যখন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের কথা পড়তাম, তখন আমার মনের সমস্ত উল্লাস-উচ্ছ্বাস নেমে আসতো আমার কণ্ঠজুড়ে।

যখন করুণ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা পড়তাম, তখন কান্নায় জড়িয়ে আসত  গলা। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকটায় যেন নেশায় পেয়ে বসেছিল আমাকে। উত্তেজনা আর প্রবল আগ্রহে অপেক্ষা করতাম, কখন পড়ব বাংলাদেশের খবর। এই খবর পড়ার জন্য কখনো কখনো রাতে বাড়িও ফিরিনি। রাত কাটিয়েছি আকাশবাণী ভবনে। ভোরের খবর পড়তে হবে যে!

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করে।

পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরে ১৯৩৪ সালের ২৫ জুন জন্মগ্রহণ করা দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালের ২ জুন কলকাতায় মারা যান।

 

সুত্রঃ যুগান্তর