বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা পত্রেও স্বীকৃতি পায়নি বাঘার দুই শহীদ পরিবার

বাঘা প্রতিনিধি:
প্রতি বছর এই সময় এলেই রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার দশআনি ঋষিপাড়া মহল্লার শহীদ রাশ চেীধুরী ও প্রবাস দাসের স্ত্রী, ছেলে এবং তাদের উত্তর সূরীদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কিন্তু এই দুই পরিবারকে ৪৬ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা ও শহীদ স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে ৩০ মার্চ রাশ চৌধুরি ও ১৫ এপ্রিল প্রবাস দাস পাকহানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। এই দুই শহীদ পরিবারকে বঙ্গবন্ধ শেখ মুবিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ২০ নভেম্বর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। পাশাপাশি এক হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়, মর্মে তাদের কাছে একটি বঙ্গবন্ধুর স্বহস্তে লিখিত প্রেরিত পত্র সংরক্ষিত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা পত্র নিয়ে শহীদ পরিবার বিভিন্নস্থানে ধরনা দিয়েও আজও স্বীকৃতি পায়নি। এই সময় এলেই শ্রদ্ধা, ফুল আর গানে গানে এই দুই শহীদ পরিবারকে স্থানীয়ভাবে স্মরন করা হয়। অন্য সময়ে কিছুই মনে করা হয় না তাদের পরিবারের কথা।

উপজেলার দশআনি ঋষিপাড়া মহল্লার শহীদ রাশ চেীধুরীর একটি আধাপাকা ঘর ও তিনটি কাঁচা ঘরের দেয়াল খসে পড়ছে। এই বাড়িতে থাকেন শহীদ রাশ চেীধুরীর বড় ছেলে রতন চেীধুরী (৫২), স্ত্রী পলি চেীধুরী (৪৫), ছেলে রানা (১৯), অর্ক (৯), মেজো ছেলে জীবন চেীধুরী (৪৫), স্ত্রী মাধুরি চেীধুরি (৪০), একমাত্র মেয়ে মন্দিরা (১১), ছোট ছেলে স্বপন চেীধুরী (৪২), স্ত্রী রিতা চেীধুরি (৩৫), এক ছেলে রিক (১০)।

অপর দিকে একই মহল্লার শহীদ প্রবাস দাসের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, দুইটি ছোট ছোট টিনের ছাপড়া ঘর, একটি ঘরে থাকেন শহীদ প্রবাস দাসের স্ত্রী গীতা দাস। আরেক ঘরে থাকেন তার ছেলে সুনীল দাস। ঘরের অবস্থা ভাল না। খড়ের বেড়াগুলো ভেংগে গেছে। এই বাড়িতে থাকেন শহীদ প্রবাস দাসের স্ত্রী গীতা দাস (৬৩), ছেলে সুনীল দাস (৩৯), স্ত্রী মুক্তি দাস (৩৫), দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে দিপ্তি (১৭), বিক্রম (১৮), বিথি (৯)। প্রবাস দাসের বড় ছেলে অনিল দাস (৪৫), আট বছর পূর্বে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। তার স্ত্রী বাসনা দাস (৪২), দুই ছেলে অর্নব (১৯), ও সনদ (১৫) কে নিয়ে মানুষের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে খেয়ে না খেয়ে কোন রকম দিন পার করছে।

শহীদ প্রবাস দাসের স্ত্রী গীতা দাস জানান, বছরে একবার স্থানীয়ভাবে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আমার স্বামীর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমার এই বাড়িতে ফুল দেয়ার জন্য আসে। অন্য কোন সময় খোঁজ খবর নেয় না কেউ। এছাড়া সরকার প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে প্রতি মাসে ভাতা চালু করেছেন। কিন্তু আমাদের পরিবারকে কিছুই দেয়া হয় না।

শহীদ রাশ চেীধুররি বড় ছেলে রতন চেীধুরী জানান, আমরা ভাতা চাইনা, আমার বাবার শহীদ স্বীকৃতির শুধু সম্মান চায়। এই সম্মান দিলে আমার বাবার আত্মার তৃপ্তি পাবে বলে এই প্রত্যাশা করছি।

আড়ানী মোনোমোহীনি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, কোন সরকার এই শহীদ দুই পরিবারের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয় না। তবে ভাষার মাস এলেই আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা র‌্যালি নিয়ে দুই শহীদ পরিবারের উত্তরসূরীদের হাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসি।

স/অ