বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতিছব্বিই যেন শেখ হাসিনার স্বপ্ন

মোঃ হারুন অর রশিদ:


বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ দুই নামই একই সুত্রে গাথা৷ বঙ্গবন্ধু না থাকলে যেমন বাংলাদেশের জন্ম হতো না, তেমনী বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর ত্যাগকে সারাজীবন মনে রাখবেন৷ বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপোষহীন এক নেতা যিনি কখনো অন্যায়ের পক্ষে মাথানত করেন নাই৷ এজন্য তখনকার বিশ্বনেতারা শেখ মুজিবর রহমান সম্পর্কে তার গুনাগুন বিশ্লেষণ করে বিভিন্নভাবে আখ্যায়িত করেন। ফিদেল কাস্ত্রো, ইয়াসির আরাফাত, ইন্দিরা গান্ধি, নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট, সাদ্দাম হোসেন,হেনরি কিসিঞ্জারসহ অনেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেশের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশকে সার্বজনীন বলেছেন।

তিনি অনেকবার গেপ্তার হয়েছেন। অনেকবার মৃত্যুর সন্নিকটে এসেছেন তবুও তিনি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য লড়ায়ে অবিচল থেকেছেন। মানুষ তার ত্যাগ, তার আদর্শকে সামনে নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধু দেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি করেছিলেন। একটা স্বাধীন ভুখন্ড নিয়ে নতুন আশার প্রদিপ জ্বালাচ্ছিলেন। তিনি দেশকে বিশ্বের দরবারে উন্নত দেশ গঠনের পথে যখন নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই ৭৫ পরবর্তি হায়েনারা স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেন৷ বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করলেন। সন্ত্রাসবাহিনীরা দেশ পিছিয়ে দিলেন অনেক বছর। মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেল বাংলাদেশের। কিন্তু স্বপরিবারে হত্যা করলেও আল্লাহর রহমতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশ থাকায় বেঁচে গেলেন। তার মধ্যে বর্তমান প্রধান মন্ত্রি শেখ হাসিনা।

আজ শেখ হাসিনা বঙ্গকন্যা বিশ্ব নেতৃত্বের প্রথম সারির একজন। বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। তাঁর হাত ধরে অনেক অর্জন বাংলাদেশের। ১৯৮১ সালে সামরিক জান্তার বুটের তলায় পিষ্ট প্রিয় স্বদেশ ও অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে এসেছিলেন। সেই থেকে কঠোর ব্রত সাধনায় তাঁর দীর্ঘ পথচলা। ‘পায়ে পায়ে পাথর’ সরিয়ে দেশের মানুষের জন্য তৈরি করেছেন গণতন্ত্রের এক শক্ত ভূমি, যেখানে ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য’। শেখ হাসিনা সরকারের সংগ্রাম ও সাধনা একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে আছে আজও এবং থাকবে।

শেখ হাসিনা এমন একজন সফল নেতা, যিনি জনগণের মনের কথা বুঝতে সক্ষম। বাঙালির মানস পরিবর্তনেও তাঁর অবদান কম নয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছেন। তাঁর ইস্পাতদৃঢ় সংকল্পের কারণেই দেশ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছেন। সব লেখার মূল কথা এই যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিমিরাচ্ছন্ন সময়কে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ আজ উদ্ভাসিত এক উজ্জ্বল আলোকচ্ছটায়। তাই তিনি তিমির হননের নেত্রী।

বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করতে, দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌচ্ছাতে যেমন বারবার কারাবরণ করেছেন, বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন, মৃত্যুর সন্নিকটে এসেছেন কিন্তু কখনো তিনি দমে যাননি তেমনী আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও দেশকে উন্নত বিশ্বে পৌচ্ছাতে বারবার অত্যাচারিত হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন। তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। চোখের সামনে ২১শে আগষ্টের ভয়াবহ তাকে পিছনে টানতে পারেন নাই। সেই কঠিন সময়কে জয় করে জাতিকে সঠিক পথে তুলে এনে শেখ হাসিনা পুরো দেশকে বদলে দিয়েছেন গত ১১ বছরে। শেখ হাসিনা মূলত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকেই বাস্তবায়িত করছেন। বাবার আদর্শের প্রতিচ্ছবিই যেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা’। তিনি যে ব্রত নিয়ে দেশকে উন্নত দেশে পরিনত করতে অঙ্গিকার করেছিলেন আজ বাংলাদেশ তার দ্বার প্রান্তে। তার প্রতিটি কথা কাজ আজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তুলে ধরেন। তাই তো ১৯৯৯ সালে অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র বলেছিলেন, জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে নিয়ে গেছেন।

শেখ হাসিনার যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি এনে দিয়েছেন। যার সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘ভ্যাকসিন হিরো’,‘আইসিটি সাসটেইনেবল, ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’, ‘স্টেট ম্যান’, ‘ইস্টার অব ইস্ট’, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি বা মানবতার মা’ প্রচ্যের তারকা,হুপে-বোয়ানি’ বিশ্ব নেতাদের নেতা বা আইডল, জনগনের নেতা, বাংলার অহংকার ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গকন্যার জন্মদিন। ১৯৪১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেছিলেন৷ তার প্রথম স্বপ্ন ছিল প্রাথমিকের শিক্ষক হবার। কিন্তু লন্ডভন্ড দেশের অবস্থা দেখে সংকটময় মুহুর্তে তিনি দায়িত্ব নিয়ে যা করে দেখিয়েছেন তা পৃথিবীতে বিরল৷ আজ বঙ্গকন্যার জন্মদিনে তাই শুভেচ্ছা জানায়। শুভ জন্মদিন বঙ্গকন্যা।

বঙ্গকন্যার জন্মদিন উপলক্ষে ২০১৭ সালে তাকে নিয়ে দুইটি বই প্রকাশিত হয় যার একটি বইয়ের লেখক মিসরীয় সাংবাদিক। তাছাড়া বিভিন্ন কবিরা তার প্রশংসায় বিভিন্ন বানী শুনিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করতে,পরিবারের সবাইকে হারানো শেখ হাসিনাকে বিশাল অরণ্যের নিঃসঙ্গ হরিণের সঙ্গে তুলনা করেছেন কবি মোহাম্মদ সাদিক। তিনি একলা হরিন কবিতায় বলছেন, এই হরিণটিকে এই শ্যামল বাংলা, তার প্রকৃতি সবাই চেনে। এই হরিণটি একদা তার বাবা-মা-ভাইদের হারিয়েছে। তবে তার সঙ্গী এখন হাওড়, পাখি, শস্য, নদী ও সমুদ্র। তার দুঃখে কান্নায় বাংলার মাটি ভিজে যায়।

বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে শেখ হাসিনা যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কবি মুহাম্মদ সামাদ। তিনি ভূমিকন্যা’ কবিতায় লিখেছেন জাতিসংঘে, অগণিত বিশ্বসভায় তোমার সাহস আর শৌর্যের প্রভায় সাম্য মুক্তি শান্তির আকাঙ্ক্ষায় এশিয়া-আফ্রিকা ল্যাটিন আমেরিকায় সংগ্রামরত মানুষেরা জেগে ওঠে।

দেশ-জাতির প্রতি প্রেম, বীরত্ব-নেতৃত্ব ও ভালোবাসার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কামাল চৌধুরীর ‘বাঙালির সম্মান’ কবিতাটি শেখ হাসিনার সিংহভাগ বৈশিষ্ট্য ধারণে সক্ষম। ষাণ্মাত্রিক মাত্রাবৃত্তে রচিত এই কবিতাটি কেবল সুখপাঠ্যই নয়, একইসঙ্গে বোধের গহনে অভিঘাত সৃষ্টিতেও পারঙ্গম। এই কবিতায় শেখ হাসিনাকে তার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মতোর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

মোঃ হারুন অর রশিদ: , সহঃ শিক্ষক, পাকুড়িয়া,পবা, রাজশাহী