বগুড়ায় শিশুকে ধর্ষণ ও আরেকজনকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে নারীসহ তিন ডিজে গ্রেপ্তার

ডিজে (ডিস্ক জকি) বানানোর আশ্বাস দিয়ে দুই মেয়েশিশুকে দলে ভিড়িয়েছিলেন বগুড়ার এক নারী ডিজে। একজন সবে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে, বয়স ১২ বছর। আরেকজন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী, বয়স ১৩ বছর। এই দুই শিশুর একজনকে ধর্ষণ ও আরেকজনকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ওই নারীসহ তিন ডিজেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বগুড়া শহরের কালীতলা এলাকার বেনুকুন্ড লেনের মিনকো প্যালেস নামে আবাসিক ভবনের একটি ফ্ল্যাটে গত বৃহস্পতিবার রাতে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী শিশু দুটির বাবা বগুড়া সদর থানায় অভিযোগ করেন।

শুক্রবার রাতেই পৃথক অভিযান চালিয়ে শহরের উত্তর চেলোপাড়া এলাকার হরিবাসর সড়কের একটি বাসা থেকে ধর্ষণের অভিযোগে ডিজে রাজু আহমেদ (২৬), গাবতলী উপজেলা থেকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ডিজে নয়ন মিয়া শাহ (২৮) এবং ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে শহরের কালীতলা এলাকার বেনুকুন্ড লেনের মিনকো প্যালেস নামে একটি আবাসিক ভবন থেকে ডিজে নিশা খাতুন ওরফে নেহাকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা-পুলিশ।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হ‌ুমায়ূন কবীর বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে আজ শনিবার সকালে বগুড়া সদর থানায় নারী নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে আজ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার রাজু আহমেদ গাইবান্ধা শহরের থানাপাড়ার, নয়ন মিয়া শাহ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নিশিন্দারা আকন্দপাড়ার ও নিশা খাতুন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কমলপুর চরের বাসিন্দা। নিশার পরিবার বর্তমানে বগুড়া শহরের মালগ্রাম চাপরপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত রাজু আহমেদ, নয়ন মিয়া শাহ ও নিশা খাতুন তিনজন একটি ডিজে দলের সদস্য। ডিজে পার্টিতে গান বাজানো ও নাচ করাই তাঁদের পেশা। এর মধ্যে নিশা শহরের কালীতলা বেনুকুন্ড লেনের মিনকো প্যালেসের চতুর্থ তলায় একাই একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। রাজু ভাড়া থাকেন শহরের উত্তর চেলোপাড়া হরিবাসর লেনে। ডিজে নিশার বাবা-মা শহরের মালগ্রাম চাপড়পাড়া এলাকায় বসবাসের সুবাদে ওই এলাকার পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণির ওই দুই শিশুশিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় হয় নিশার। নিশার মাধ্যমে দুই শিশু তাঁর ডিজে দলে যোগ দেয়। সেখানেই পরিচয় হয় ডিজে রাজু ও নয়নের সঙ্গে।

দুই শিশুর পরিবারের অভিযোগ, ডিজে পার্টির কথা বলে বৃহস্পতিবার রাতে কৌশলে বাড়ি থেকে দুই শিশুকে নিশার ফ্ল্যাটে ডেকে নেন রাজু আহমেদ। সেখানে রাজু ডেকে নেন আরেক ডিজে নয়ন মিয়া শাহকে। রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে নিশার সহযোগিতায় একটি কক্ষে পঞ্চম শ্রেণির শিশুকে নিয়ে ডিজে রাজু ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাতভর ধর্ষণ করেন। অন্য আরেকটি কক্ষে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন নিপীড়ন করেন নয়ন মিয়া শাহ।

অভিভাবকদের আরও অভিযোগ, শুক্রবার সকালে শিশু দুটি বাড়িতে গিয়ে নিজ নিজ পরিবারের কাছে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের কথা ফাঁস করে দেয়। পরে দুই শিশুর বাবা অভিযোগ করেন বগুড়া সদর থানা-পুলিশের কাছে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ শুক্রবার রাতেই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিন ডিজেকে আটক করে।

সূত্র: প্রথম আলো