হাসপাতালের একজন কর্মচারী অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলায় বগুড়ায় একজন রোগীর মৃত্যুর পর অভিযুক্তকে আজ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মাত্র ৫০ টাকা বখশিশ কম দেয়ায় গুরুতর আহত একজন রোগীর মুখে লাগানো অক্সিজেন মাস্ক ও পাইপ খুলে দিয়ে চলে যায় ঐ অভিযুক্ত ওয়ার্ড বয়।
এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগীটি মারা যান।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন ঘটনার পর রোগীর বিক্ষুব্ধ আত্মীয়দের দাবীর মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করেছে।
ঘটনার পর বুধবার দিনভর হাসপাতালে বিক্ষোভ করার পর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি মামলা দায়ের করেছে।
এরপর অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়েছেন।
তিনি হাসপাতালে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
কিন্তু নিজের ডিউটি আওয়ারের পরে হাসপাতালে রোগীদের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা দেয়া এবং দালালির কাজ করে থাকেন।
এই ব্যক্তি দালালি করার অপরাধে আগেও র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছিল বলে র্যাব জানায়।
ঘটনার পর পালিয়ে বগুড়া থেকে নওগাঁ চলে যায় ওই ব্যক্তি।
এরপর সেখান থেকে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর আসে ।
ঘটনা কী হয়েছিল?
র্যাবের খন্দকার আল মঈন বলেছেন, মঙ্গলবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বিকাশ চন্দ্র দাস নামে এক কিশোরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল।
ওই সময় জরুরী বিভাগের বাইরে দাড়িয়ে থাকা আসাদুল হক মীর ধলু নামে ওই ব্যক্তি আহত কিশোরের পরিবারকে বলে, হাসপাতালে ভর্তিসহ অন্যান্য সেবার ব্যবস্থা করে দেবে সে।
এবং এজন্য তাকে ৫০০ টাকা দিতে হবে। কিন্তু দরকষাকষিতে সেটি ২০০টাকায় নির্ধারিত হয়।
এরপর ধলু আহত কিশোরটিকে জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়, সেখানে চিকিৎসক তাকে অক্সিজেন দিয়ে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় নিউরো-সার্জারি বিভাগে ভর্তির জন্য পাঠান।
তখন বিকাশকে ট্রলিতে তুলে লিফটে করে তিনতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই সময় সেখানে কোন বেড ফাঁকা না থাকায় মেঝেতে বেডে ভর্তি করা হয়।
র্যাব বলছে, এরপর ধলু তার পাওনা ২০০টাকা চায়, কিন্তু বিকাশের পরিবারের কাছে ছিল সাকুল্যে ১৫০টাকা।
দেড়শো টাকা নিয়ে ক্ষিপ্ত ধলু বিকাশের মুখের লাগানো অক্সিজেন মাস্ক এবং পাইপ খুলে ফেলে চলে যায়।
অক্সিজেনের অভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যায় বিকাশ।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মি. মঈন বলেন, বিকাশের মৃত্যু এবং তার পরিবারের বিক্ষোভের পর ১১ই নভেম্বর মধ্যরাতে বগুড়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি মামলা দায়ের করেছে।
অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে র্যাব জানতে পেরেছে অক্সিজেন মাস্ক সরিয়ে নেয়ার কারণেই রোগীর মৃত্যু ঘটেছে।
বিবিসি