ফেসবুকের বান্ধবীর ফাঁদে খোয়া গেল ১৯ লাখ টাকা!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ফেসবুকে পরিচয়। তার পর একেবারে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যবসার প্রস্তাব। যিনি প্রস্তাব দিলেন তিনি বেশ কেউকেটা মার্কিন সেনাবাহিনীর নারী অফিসার।

আর সেই লোভনীয় ব্যবসার টোপ গিলেই প্রায় ১৯ লাখ টাকা খোয়ালেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাগুইআটির হিন্দুস্তান কেবলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ভাস্কর ঘোষ।

শুরুটা এপ্রিলের গোড়ার দিকে। সদ্য ফেসবুক ব্যবহার করা শুরু করেছেন ভাস্করবাবু।

হঠাৎ অ্যানে এলিজাবেথ নামে এক শ্বেতাঙ্গ সুন্দরীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। বন্ধুত্বের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি ভাস্কর। তার পর থেকেই শুরু হয় চ্যাট।

আর সেখান থেকেই জানতে পারেন, অ্যানে মার্কিন সেনা অফিসার। কিন্তু বেশিদিন আর চাকরি করতে চাননা। আর সেখান থেকেই ব্যবসার প্রসঙ্গ ওঠে।

ভারতের ভেষজের নাকি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক কদর। আর সেই সূ্ত্রেই সেই ভেষজের বীজের ব্যবসার প্রস্তাব ভাস্করকে দেয় অ্যানে।

এই মহিলাই ভাস্করকে বিনিতা শর্মা নামে এক জনের খোঁজ দেন। বিনিতাই নাকি ভারতে ওই বিশেষ ভেষজ বীজের সরবরাহকারী।

এপ্রিলেই বিনিতার ব্যাংক হিসাবে ১৯ হাজার টাকা পাঠান ভাস্কর। তার পরিবর্তে কুরিয়ারে আসে কয়েকটি বীজ।

এরপর অ্যানের পাঠানো মার্কিন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে বৈঠক। ভাস্করের কাছ থেকে একটি বীজ একশো ডলার দিয়ে কিনে নেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বীজ আমেরিকার পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর পরবর্তী বার্তা দেয়া হবে।

সে অনুসারে কয়েকদিন পরেই ভাস্কর একশো প্যাকেট বীজের অর্ডার পান। চুক্তি হয়, প্রতি প্যাকেট ৮১ হাজার টাকায় কিনবে মার্কিন ওই সংস্থা।

ভাস্কর বার্তা পেয়েই বিনিতাকে একশো প্যাকেটের অর্ডার দিয়ে দেন এবং দাম হিসেবে ১৮ লাখ টাকা বিনিতার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন। এরপর সপ্তাহ চলে যায়। কেউ আর সেই বীজ নিতে যোগাযোগ করে না।

এদিকে অ্যানে, বিনিতা বা সেই মার্কিন কোম্পানির কর্মকর্তা কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারছেন না ভাস্কর। তখন তার টনক নড়ে।

গোটা বিষয়টি বিধাননগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানাতে জানানোর পর তদন্তে জানা যায় গোটাটাই সাজানো নাটক। আগাছার বীজ প্যাকেটবন্দি করে ভেষজের বীজ বলে প্রায় ১৯লাখ টাকা প্রতারণা করা হয়েছে ভাস্করকে।

আর গোটা পরিকল্পনার গোড়াতে রয়েছে সঞ্চিতা দে নামে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা এক বাঙালি যুবতী।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরেই এই চক্রকে ধরা হয়েছে বলে দেশটির পুলিশ জানিয়েছে।

বেঙ্গালুরুতে ঘাঁটি গেড়ে থাকা ঘানা, নাইজেরিয়া এবং গিনির কয়েকজন যুবকের সঙ্গে পরিকল্পনা করে এই প্রতারণার ফাঁদ পাতে সঞ্চিতা।

বিধাননগর পুলিশ সঞ্চিতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। বেঙ্গালুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়তে গিয়ে দুবছর আগে ঘানার যুবক জনসনকে বিয়ে করে সে। তাদের সাত মাসের কন্যাসন্তানও আছে।

শনিবার সঞ্চিতাকে তার শিশুসন্তানসহ আদালতে তোলা হয় তার স্বামী জনসন ও আরও দুই অভিযুক্তের সঙ্গে।- আনন্দবাজারপত্রিকা অনলাইন।