ফের পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা: পুড়িয়ে মারা কি তবে নতুন সংস্কৃতি হয়ে গেল?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে খোদ নিজের আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে হত্যার রেশ না কাটতেই আবারও ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।

এবারের ঘটনা আরও মর্মান্তিক। রাফির ঘটনায় অন্যায়ের প্রতিবাদ থাকলেও রাজবাড়ী জেলার সদর থানায় স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার পেছনে কাজ করেছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং তা আদায়ে ব্যর্থতা। জানা যায়, ১২ এপ্রিল স্কুল থেকে ফেরার পথে পরিকল্পিতভাবে জঙ্গলে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে শিল্পী বেগম নামে এক প্রতিবেশী মহিলা এবং তার সহযোগীরা।

কিন্তু চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বৃহস্পতিবার বোরকা পরা দুই ব্যক্তি এসে বাড়ি থেকে ছাত্রীটিকে পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে থাকা আরও দুই বোরকা পরা ব্যক্তি মিলে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাগ্যের জোরে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ছাত্রীটি। এভাবে চাঁদা না পেয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবক্ষেত্রে নারী নির্যাতন-নিপীড়ন সীমার বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। বর্বরতার কোন পর্যায়ে গেলে নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা ও হত্যাচেষ্টা করা হয়, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে এক গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে কয়েকদিন আগে। শিরিনা আক্তার নামে ২২ বছর বয়সী ওই গৃহবধূ এখন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন। যে কোনো নির্যাতনের ঘটনাই দুর্ভাগ্যজনক; কিন্তু মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে চাওয়া নরপশুগুলোর দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে এ ধরনের প্রবণতা যে কমবে না, তা বলাই বাহুল্য। নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

তার খুনিদের যেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার, তেমনি রাজবাড়ীর স্কুলছাত্রী ও ময়মনসিংহের গৃহবধূকে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদেরও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীকে বিচারের মুখে ফেলা, ভিকটিমের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা গেলেই কেবল যে কোনো অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব।

আশার কথা, স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পর্নোগ্রাফিসহ বিভিন্ন আইনে শিল্পী বেগমসহ অজ্ঞাত চারজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এখন দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা দরকার। রাফির ঘটনায় পুলিশ মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে, প্রভাবশালীদের পক্ষে স্থানীয় প্রশাসনও ভিকটিমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

রাজবাড়ীর ঘটনায় তেমনটি ঘটবে না বলে আমরা আশাবাদী। নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহল, সর্বোপরি সরকারের কঠোর ভূমিকা থাকলে নারী ও শিশু নির্যাতন সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা যাবে বলে আশা করা যায়। রাফির মতো সবক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আশা না করে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলেই পরিস্থিতির উন্নতি হতে বাধ্য।