ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলাতে খরচ কত?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দেনার দায়ে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে আলোচিত ফারমার্স ব্যাংক গত ১৬ মার্চ থেকে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে।  রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ওইদিন নতুন লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় পদ্মা ব্যাংকের। নাম ও লোগো বদলাতে খুব বেশি টাকা খরচ না হলেও ব্যাংকটি এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। লেনদেনও বাড়ছে।

জানা গেছে, ফারমার্সের বদলে পদ্মা নামে লাইসেন্স নিতে ব্যাংকটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কোনও টাকাই দিতে হয়নি। তবে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরকে (আরজেএসসি) কয়েক ধরনের চার্জ দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে এই চার্জ এক লাখ টাকারও কম।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো. নাছের বলেন, ‘ফারমার্সের বদলে পদ্মা নামে লাইসেন্স নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে তাদের কোনও টাকাই দিতে হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনও চার্জ ছাড়াই ব্যাংকের লাইন্সেস দেয়। পদ্মা ব্যাংকের লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছে ফি ছাড়াই।’ কোনও ধরনের ফি ছাড়াই দেশের ব্যাংকগুলোর শত শত শাখারও লাইসেন্স দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনও ব্যাংকেরই লাইসেন্স বাবদ কোনও ফি নেয় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিনি বলেন,কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতির পর আরজেএসসি থেকে নামের ছাড়পত্র নিতে হয়েছে। সেখানে হয়ত কিছু টাকা ফি দিতে হয়েছে পদ্মা ব্যাংককে।’

এদিকে নাম বদলানোর পর থেকে ব্যাংকটির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। লেনদেনও বাড়ছে। এ কারণে ব্যাংকটিও এখন ব্র্যান্ডিংকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া সমালোচিত ফারমার্স ব্যাংকের বদনাম মানুষের মন থেকে দূর করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে ব্যাংকটি। এরই অংশ হিসাবে নাম ও লোগো বদল করেছে।

প্রসঙ্গত,ব্যাংক খাতে ব্র্যান্ডিং ইস্যুতে লোগো বদলের ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে থাকে। বেসরকারি ব্যাংক অনেক সময় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অথবা এগিয়ে যাওয়ার জন্য লোগো বদলানোর মতো কৌশল হাতে নেয়। আবার লোগো বদলকে কেন্দ্র করে ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা তসরুপ করার নজিরও আছে। তবে বিপদে পড়লেই কেবল ব্যাংকের নাম বদলানো হয়। এর আগে ২০০৬ সালে দেউলিয়া হওয়া ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে করা হয় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। ১৯৯২ সালে ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) বিলুপ্ত করে ইস্টার্ন ব্যাংক নাম দেওয়া হয়।

এদিকে ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সরকারের হস্তক্ষেপে ডুবতে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের বেশিরভাগ শেয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী,অগ্রণী,জনতা,রূপালী এবং আইসিবি কিনে নয়। ব্যাংকটির ৬৮ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার এখন এই পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি থেকে তফসিলি ব্যাংকসমূহের তালিকায় ‘দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড’ এর নাম ‘পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড’ হিসেবে পরিবর্তন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এহসান খসরু বলেন, ‘নাম বদলাতে তেমন টাকা খরচ না হলেও লোগো উন্মোচন করাকে কেন্দ্র করে আমাদের খরচ হয়েছে ৩৫ লাখ টাকার মতো। তিনি বলেন,নতুন নামে ব্র্যান্ডিং করতে পেপারে বিজ্ঞাপন ও লোগো উন্মোচনকে কেন্দ্র করে আমাদের খরচ হতে পারে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘নাম বদলানোর পর যখন পদ্মা নাম হয়েছে তখন থেকে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। লেনদেনও বাড়ছে। তিনি উল্লেখ করেন,আগের নামে (ফারমার্স) যে সমস্যা ছিল তা এখন কেটে গেছে। গত ২০ দিন আগে ক্লিয়ারিংয়ে অল্প পরিমাণ ৭০ লাখ থেকে ৯০ লাখ টাকার কাছাকাছি আসতো। এখন ক্লিয়ারিংয়ে আসছে কোটি টাকার ওপরে। এখন আমরা নতুন ও আকর্ষণীয় কিছু প্রোডাক্ট লঞ্চিং (চালু) করতে যাচ্ছি। তিনি জানান,ব্যাংকটি এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে নাম ও লোগো বদলানোর কারণে।’

এহসান খসরু বলেন, ‘আমরা এখন ব্র্যান্ডিংকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা সিরিয়াস ব্র্যান্ডিং করতে চাই। সে জন্য ব্যাংকে ব্র্যান্ড মার্কেটিং ডিভিশন খুলেছি। সেভাবেই বিভাগটি সাজানো হচ্ছে। কর্মকর্তারাও সেভাবেই কাজ শুরু করেছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘যেসব গ্রাহক আশা নিয়ে পদ্মা ব্যাংকে আসবেন,তাদেরকে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবো। গ্রাহক যাতে দ্রুত সময়ে ভোগান্তি ছাড়া সহজে সেবা পেতে পারে সেই ধরনের অ্যাপস এর ব্যবহার বাড়ানোর দিকে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘চেক জমা দিতে এখন আর কোনও ব্যাংকে যেতে হবে না। যে কোনও ব্যাংকের চেক বাসায় বসেই জমা দেওয়া যাবে। মোবাইলের মাধ্যমে চেকটা স্ক্যান করে অ্যাপসে দিলেই মুহুর্তের মধ্যে ব্যাংকটিতে চলে আসবে। আমরা সেই ধরনের অ্যাপস এর ব্যবহার করতে যাচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘লোগো বদল করা ব্যাংকের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ করাই এর লক্ষ্য। তবে ফারমার্স ব্যাংকের বিষয়টি একটু ভিন্ন। তার মতে, ফারমার্স ব্যাংকের ব্যাপারে অনেক সমালোচনা ছিল। ওই ব্যাংকটির ব্যাপারে মানুষের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছিল। সেখান থেকে ব্যাংকটিকে সরিয়ে আনতে নাম ও লোগো বদল করতে হয়েছে। যাতে মানুষ এই ব্যাংকটির ব্যাপারে আবার আশাবাদী হতে পারে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘নাম বদল করাতে ব্যাংকটি এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। যেহেতু ব্যাংকটির ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে সবাই সতর্ক, সে কারণে ব্যাংকটির নাম ও লোগো বদলানোর ক্ষেত্রে বিলাসিতা হবে না। তবে কম খরচেও তারা ভালো মার্কেটিং করছে। ব্যাংকটির যে বদনাম ছিল, নাম বদলানোর পর তা কেটে যাচ্ছে।’