ফল ঝুলে গেলে কী হতে পারে

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের ফল বিতর্কিত করতে পারেন—এই আশঙ্কার কথা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট শিবির থেকে আগেই বলা হচ্ছিল। গতকাল বুধবার গণনা শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্প নিজের বিজয় দাবি করে ভোট গণনা বন্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন দাবি করেন, তিনি জিততে চলেছেন। এই পটভূমিতে ২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফয়সালা হতে পারে আইনি ও রাজনৈতিক কয়েকটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে।

ট্রাম্প অবশ্য আগেই বলেছিলেন, নির্বাচনে পরাজিত হলে তিনি রায় মেনে না-ও নিতে পারেন। প্রয়োজনে যেতে পারেন উচ্চ আদালতে। এ জন্য তিনি প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।

চলমান করোনা সংকটসহ আরো কয়েকটি কারণে এবারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগেই ভিন্ন চেহারা পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রেকর্ডসংখ্যক ডাকযোগে বা ‘মেইল-ইন’ ভোট, ইলেকটরেটদের (৫৩৮ জন) মধ্যে অতি মাত্রায় মেরুকরণ কিংবা সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের ‘বিভাজনের’ স্পষ্ট আভাস। এ ছাড়া যেকোনো একটি ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ অঙ্গরাজ্যের ফল সমান-সমান বা চুল পরিমাণ পার্থক্য হলেও উভয় পক্ষই আদালতে ধরনা দিতে পারে। সব মিলিয়ে ভোটের ফল অমীমাংসিত বা ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট চার শর বেশি মামলা হয়েছে এবার, যা মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ডাকযোগে ভোটের কারণে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী বাইডেনকে ‘যুগ্ম বিজয়ী’ ঘোষণা করা হতে পারে বলেও বিশ্লেষকের একাংশ পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে। ২০০০ সালের মতো ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা করেছেন অনেকে। ভোটের চূড়ান্ত ফায়সালা হয়েছিল সেবার সুপ্রিম কোর্টে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো কারণে নির্বাচনী ফল অমীমাংসিত থাকলে কিংবা কে বিজয়ী হলেন, তা স্পষ্ট না হলে সে ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান। দেশটির সংবিধানের ১২তম সংশোধনী অনুযায়ী, আগামী ৬ জানুয়ারির মধ্যে নবনির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা ঠিক করবেন, কে প্রেসিডেন্ট হবেন। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়া নির্ভর করবে উচ্চকক্ষ সিনেটের ওপর। এই ব্যবস্থা ‘কনটিনজেন্ট ইলেকশন’ নামে পরিচিত।

এটিও কোনো কারণে আটকে গেলে বা সর্বোচ্চ ২০ জানুয়ারির মধ্যে ফয়সালা করা না গেলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট বা স্পিকারকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে এর মীমাংসা টানা হবে। অবশ্য এমন ঘটনা উনিশ শতকের পর আর ঘটেনি দেশটিতে।

অবশ্য ভোটের লড়াই আদালত পর্যন্ত গড়ালে সেখানে হয়তো সুবিধা পেতে পারেন ট্রাম্প। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন বিচারপতির মধ্যে ছয়জনই রক্ষণশীল। সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর ট্রাম্পের পছন্দের প্রার্থী এমি কনি ব্যারেটের নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে আছে রিপাবলিকানরা। এই ছয় বিচারপতির মধ্যে তিনজনই আবার ট্রাম্পের নিয়োগ দেওয়া।

২০০০ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ‘পক্ষপাতে’র কারণেই জিতে যান (৫ঃ৪ ব্যবধানে) জর্জ ডাব্লিউ বুশ। মাত্র ৫৩৭ ভোটের ব্যবধানে বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রথম।

অন্যদিকে এবার যেহেতু রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন, তাই সেসব ব্যাটলপেপার পৌঁছাতে এবং গণনা শেষ হতে ৩ নভেম্বরের পর কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে। পেনসিলভানিয়ায় ভোটের দিনের (৩ নভেম্বর) পর আরো তিন দিন ডাকযোগে পাঠানো ব্যালটপেপার গ্রহণ করা হবে।

ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান শিবির মেইল-ইন বা ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরে গ্রহণ করার বিরোধিতা করে আসছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে একের পর এক মামলায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট শিবির।

গত ২৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরও ব্যালট গ্রহণে অতিরিক্ত সময় অনুমোদনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এতে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে ট্রাম্প শিবির। যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম সার্কিট কোর্ট অব আপিলও ২৯ অক্টোবর মিনেসোটায় এবং এর আগে ২৮ অক্টোবর পেনসিলভানিয়ায় সুপ্রিম কোর্ট ডাকযোগে আসা ব্যালট নির্বাচনের দিনের পর গ্রহণের সময়সীমা নিয়ে একই রকম দুটি রায় দিয়েছেন।

ইলেকটোরাল ভোট নিয়েও ‘জটিলতা’ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সাধারণত গভর্নররা তাঁদের রাজ্যের ফল চূড়ান্ত করে কংগ্রেসকে জানান। তবে রাজ্যের আইনসভাও ভিন্ন ফল দিতে পারে। ১৮৭৬ সালে তিনটি রাজ্যের এমন ‘ডুয়েলিং ইলেকটরস’ ফল দেওয়া হয়। এর জেরে পরের বছর ইলেকটোরাল কাউন্ট অ্যাক্ট (ইসিএ) পরের বছর পাস হয়। ওই আইন অনুযায়ী কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চকক্ষ সিনেট ভিন্নভাবে যেকোনো একটি ফল গ্রহণ করতে পারে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ