ফরম পূরণ প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ রাবি শিক্ষার্থীদের

রাবি প্রতিনিধি: 
প্রতি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের প্রক্রিয়া নিয়ে  বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি ফরম পূরণের জন্য আধুনিক ও সহজ নিয়ম চালু করা হোক।
জানা যায়, প্রতি সেমিস্টারে পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রথমে বিভাগ থেকে ফরম সংগ্রহ করার পর পূরণ করে জমা দিতে হবে। তারপর সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর শেষে ফর্মগুলো নিজ নিজ বিভাগে টাকা জমা দানের রসিদসহ জমা দিতে হবে। তারপর ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর বিভাগ ফরমসমূহ যাচাই-বাছাই করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে প্রেরণ করবে। এতে সময় অপচয় এবং এই ভবন থেকে ওই ভবনে যাওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ বিষয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, আমরা বিভাগ থেকে হলে ফর্ম নিয়ে গেলে অনেক সময় স্বাক্ষরের জন্য শিক্ষক পাই না। তখন ফর্ম রেখে যাওয়ার জন্য বলা হয়। পরের দিন এসে সেই ফর্ম সংগ্রহ করে বিভাগে জমা দিতে হয়। আবার ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গেলে অনেক  সময় দীর্ঘ লাইন ধরতে হয়। এছাড়া লাস্ট ডেটে ফর্ম পূরণ করার ক্ষেত্রে এ সিস্টেম আরো জটিলতার সৃষ্টি করে। দুই দিন ধরে ফর্ম নিয়ে এই ভবন থেকে ওই ভবনে দৌড়াদৌড়ি করার ফলে আমাদের সময় ও পড়ালেখার ক্ষতির পাশাপাশি অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়।
ফার্মেসি বিভাগের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ফর্ম ফিলাপ অনলাইনে করা হলেও পুরোপুরি অনলাইন ভিত্তিক হয় নি। আমরা অনলাইনে ফর্ম পূরণ করলেও ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা জমা দিতে হয়, যা একটা ভোগান্তি। কারণ ব্যাংকে একইসাথে ভিড় শুরু হয় ১২ টার পর। ব্যাংকে ফর্মফিলাপের একটিমাত্র কাউন্টার থাকায়, কখনো কখনো ঘন্টার পর ঘন্টাও অপেক্ষা করতে হয়।
অন্যদিকে ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যান স্বাক্ষর নেওয়া, হলে হল প্রাধ্যক্ষের সিগনেচার নিতে গিয়ে অনেক সময় চলে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা একদিনে ফর্মফিলাপ শেষ করতে পারি না।
ডিজিটাল সময়ে যা ভোগান্তির কারণ।
এ থেকে মুক্তি পেতে অনলাইনে টাকা জমা নেওয়া এবং ফর্ম ফিলাপের কাগজ ব্যাংকের পরিবর্তে ডিপার্টমেন্টে বা হলে জমা নিতে শিক্ষার্থীদের জন্য সেটা আরো সুবিধাজনক হবে বলে আমি মনে করি।
সমাজকর্ম বিভগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী সজীব বলেন, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফর্ম পূরণ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার নাম। এ সময়ে সমস্যায় পড়তে হয় না এমন সংখ্যা পাওয়া দুষ্কর। প্রত্যেকবারই হল থেকে ডিপার্টমেন্ট, ডিপার্টমেন্ট থেকে ব্যাংক, ব্যাংক থেকে হল, হল থেকে আবার ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে এ দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। বর্তমানের ডিজিটালাইজেশন ও তথ্য প্রযুক্তির এ সময়ে এসেও প্রাচীন আমলের সিস্টেম কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো চলমান থাকতে পারে তা-ই প্রশ্ন! শিক্ষার্থীদের এমন ইঁদুর দৌড়ে অভ্যস্ত করেই বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ পরিস্থিতি নিরসনে তেমন কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, এমতাবস্থায় স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ফর্ম পূরণের যাবতীয় ফি নেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্মার্ট কার্ডের পরিপূর্ণ সেবা নিশ্চিত করা, ফর্ম পূরণের কাজ যথাসম্ভব সবটা অনলাইনে করার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে উক্ত সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া সম্ভব।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসাইন সরকার বলেন, এটা অনলাইনে করার কার্যক্রম চলছে। আর এখন তো এটা অনেক শর্ট। পরিবারে যেমন অভিভাবক থাকে, হলের প্রাধ্যক্ষও তেমন অভিভাবক। তার কাছে টাকা জমা দিয়ে একটা স্বাক্ষর নিতে তোমার অসুবিধা কি আছে!
প্রাধ্যক্ষ অনেক সময় হলে থাকেন না এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, সেক্ষেত্রে হাউজ টিউটরকে দিয়ে আসলে তিনি স্বাক্ষর নিয়ে রাখবেন পরদিন গিয়ে নিয়ে আসলেই হলো। ব্যক্তিভাবে এরকম অনেকেই আমার কাছে আসে আমি সাহায্য করি।
এ বিষয়ে উপ উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির বলেন, এ বিষয়ে সেরকম কোনো কার্যকম নেওয়া হয় নি। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে কথা বললে তারা ভালো বলতে পারবে যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি না।