প্রেমে সাড়া না পেয়ে বিয়ের দেড় বছর পর অপহরণ করে ধর্ষণ

একপাক্ষিক প্রেমে সাড়া না পেয়ে বিয়ের দেড় বছর পর অপহরণ করে তরুণীকে। এরপর আটকে রেখে ৬ দিন ধর্ষণ করে তাকে। পরে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার এবং ধর্ষক মাহফুজকে গ্রেফতার করে।

ঢাকার দোহার এলাকার একটি ওয়ার্কশপে ওয়েল্ডার (ঝালাইয়ের) এর কাজ করে মাহফুজ। ২ বছর আগে সোনারগাঁয়ের এক তরুণীর প্রেমে পড়ে সে।

কিন্তু ওই তরুণী তার প্রেমে কখনও সাড়া দেননি বরং মারুফ নামের এক যুবকের সঙ্গে প্রেম করে সুখের সংসার শুরু করেন দেড় বছর আগে। কিন্তু সব কিছুই উলট-পালট করে দিয়েছে সেই সাইকো প্রেমিক মাহফুজ।

দীর্ঘদিন পর সেই প্রেম প্রত্যাখ্যানের বদলা নিতে বেছে নেয় ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের মাধ্যম। আর পরিকল্পনায় অংশ নেয় তারই বড় ভাই জসীম ও ভাইয়ের স্ত্রী শারমিন। নিখোঁজ হওয়ার পর তরুণীর পরিবার সোনারগাঁ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ।

অবশেষে প্রযুক্তির জালে ধরা পড়ে সেই ‘ওয়ান সাইডেড’ প্রেমিক মাহফুজ আর মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওই গৃহবধূকে।

পিবিআইয়ের নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, মূলত ওই গৃহবধূকে অপহরণ করা হয়েছিল গত ২৩ অক্টোবর। ওইদিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ওই গৃহবধূকে তার মোবাইলে ফোন করে শারমিন নামে এক নারী।

ওই নারী গৃহবধূকে জানায়, তার স্বামীর সঙ্গে অন্য এক মেয়ের পরকীয়া সম্পর্ক আছে এবং তারা সেদিনই গোপনে বিয়ে করতে যাচ্ছে। শারমিন নামের সেই অজ্ঞাত নারীর কাছ থেকে এ খবর পেয়ে ওই গৃহবধূ তার স্বামীর মোবাইলে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পান।

এতে ওই গৃহবধূ বিচলিত হয়ে শারমিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। শারমিন তাকে স্বামীর সন্ধান দেয়ার আশ্বাস দিয়ে কাঁচপুর মেঘনা সেতু এলাকায় যেতে বলে। শারমিনের কথামতো ওই গৃহবধূ সেখানে গেলে মাহফুজসহ আরও দুই তিনজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

পরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও গেণ্ডারিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে অপহরণকারীরা ওই গৃহবধূকে দোহার এলাকায় মাহফুজের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে মাহফুজ তাকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে ভিকটিমকে নিয়ে ঢাকার পোস্তগোলা এলাকায় নিয়ে আসা হয়।

পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, গৃহবধূ নিখোঁজ হওয়ার পর গত ২৯ অক্টোবর তার পরিবার সোনারগা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। পরবর্তীতে আমাদের কাছে আসলে আমরা সেই জিডির সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করি এবং গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকা থেকে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়।

পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন শুক্রবার রাতে দোহার এলাকা থেকেই মাহফুজকে গ্রেফতার করা হয়।

মনিরুল ইসলাম আরও জানান, উদ্ধারের সময় ওই গৃহবধূ মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন। মূলত, প্রতিশোধ নেয়ার জিঘাংসা থেকেই এই অপকর্ম চালিয়েছে বলে মাহফুজ স্বীকার করেছে। আর তার এই কাজে সহায়তা করেছে বড় ভাই জসীম ও তার স্ত্রী শারমিন।

এ ঘটনায় নির্যাতিত গৃহবধূর মা বাদী হয়ে মাহফুজ, তার বড় ভাই জসীম ও ভাবি শারমিনকে আসামি করে সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছেন। একইসঙ্গে গ্রেফতারকৃত আসামি মাহফুজকে তিনদিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানোসহ অপর দুই আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

 

সূত্রঃ যুগান্তর