প্রেমিকার সাথে দেখা করার অপরাধে জরিমানা: টাকা গেল প্রভাবশালীদের পকেটে

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:
নওগাঁর মান্দায় স্কুল ছাত্রীর সাথে কথিত প্রেমিকের দেখা করার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। এছাড়া ভুক্তভুগীদের মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশ না করার ব্যাপারে হুমকি প্রদর্শণ করে আসছেন প্রভাবশালীরা।

জানা গেছে, মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের স্কুল পড়ুয়া মেয়ের সাথে পার্শ্ববর্তী ভেবরা গ্রামের ইরাক প্রবাসি বেলালের ছেলে আব্দুর রহমানের (২০)। এ সম্পর্ক নিয়ে শনিবার সন্ধ্যার দিকে মেয়েটির বাড়ির সামনের রাস্তায় আব্দুর রহমান দেখা করতে আসে। এ সময় দুুজনকে গল্প করতে দেখে গ্রামের মনতাজ হোসেনের ছেলে ফিরোজ হোসেন (২৬) মেয়েটিকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। এরপর মেয়েটিকে জোর পূর্বক বাড়ির পাশে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তার চিৎকারে স্থানীয়রা এসে ফিরোজকে আটক করে। পরে থানা পুলিশে সংবাদ দিয়ে শনিবার রাতেই তাকে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী।

এরপর ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় গনেশপুর ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন মন্ডল ও তার বাহিনী নাটকিয়তা শুরু করেন। বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে প্রেমিকের কাছ থেকে অন্যায় ভাবে জোর পূর্বক ৫০ হাজার টাকা নিয়ে পকেটস্থ করেছেন মাতব্বররা।
আব্দুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে জানান, গত রবিবার সকালে উপজেলার সতীহাটের অদুরে ম্যাজিষ্ট্রেটের ব্রয়লারের পার্শ্বে দিন মুজুরি হিসেবে টিনের বেড়া বাঁধানোর কাজ করছিলাম। এসময় চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন মন্ডলের নির্দেশে আমাকে আটক করে নিয়ে আসে গ্রাম পুলিশ খোরশেদ। এরপর আমাকে চেয়ারম্যানের অফিস সতীহাট শহীদ মিনার মার্কেটে আটকে রেখে আমার অভিভাবকদের খবর দেয়া হয়। মেয়েটির সাথে আমার দেখা করার অপরাধে আমাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে বলেন। আর টাকা না দিলে আমাকে থানা পুলিশে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। পরে ১ লাখ টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা দাবী করা হয়।

তিনি বলেন, আগামী ২ এপ্রিল থেকে আমার এইচএসসি পরীক্ষা। সেজন্য ভবিষ্যতের কথা ভেবে ১০ হাজার টাকা তাদের দিতে রাজী হই। কিন্তু চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী স্থানীয় যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেনসহ কয়েকজন অন্যায় ভাবে টাকা দাবী করে বসেন। পরবর্তীতে আমার অভিভাবকেরা বিভিন্ন স্থানে হাওলাদ করে ৫০ হাজার টাকা চেয়ারম্যান ও তাদের লোকজনকে দিলে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়।

অন্যদিকে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন ওই টাকা ভুক্তভোগী প্রেমিকাকে না দিয়ে নিজেরাই পকেটস্থ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায় তারা কোন টাকা পায়নি। এছাড়া একই ঘটনার সহযোগী হিসেবে আব্দুর রহমানের বন্ধু মীরপুর গ্রামের মজিবর কসাইয়ের ছেলে রায়হানকেও আটক করে টাকা নিয়েছে বলেও জানা গেছে।

ইরাকে কর্মরত আব্দুর রহমানের বাবা বেলাল হোসেন মুঠোফোনে জানান, আগামী ২ তারিখ ছেলের এইচএসসি পরিক্ষা, তাই ছেলের ভবিষ্যত চিন্তা করে তাদের অন্যায় দাবীকৃত ৫০হাজার টাকা দেয়া হয়েছে কিন্তু দয়া করে পেপার পত্রিকায় কিছু লিখবেন না।

ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে গেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন নিউজ না করার জন্য বিভিন্ন ভাবে তাদেরকে হুমকি দেন।

যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেন বলেন, সবার সর্ব সম্মতিক্রমে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। আর ৫০ হাজার টাকার বিষয়ে বলেন, সমস্ত টাকা মোফাজ্জল হাজীর কাছে জমা দেয়া আছে।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার শাহাদৎ হোসেন বলেন, ঘটনার মূল হোতা ফিরোজ হোসেনকে শনিবার পুলিশ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। কিন্তু পর দিন (রবিবার) স্কুল ছাত্রীর প্রেমিক আব্দুর রহমানকে আটক করে জোর পূর্বক টাকা আদায় করা হয়েছে। যা অন্যায় খুবই অন্যায়।

ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন মন্ডল সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমার জরুরী কাজ থাকায় ফারুক ও সোহেলকে দায়িত্ব দিয়ে চলে যাই। যাওয়ার সময় তাদেরকে বলে যাই, যদি প্রয়োজন হয় থানা পুলিশ করতে হবে। টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সাক্ষাতে কথা বলতে বলেন।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, সাংবাদিককে হুমকির বিষয়ে মৌখিক ভাবে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দেখব বলে জানান তিনি।
স/শ