প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের টেকসই উন্নয়ন করতে হবে: লিটন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, নগরীতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম টেকসইভাবে করতে হবে। সকলের সহযোগিতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। বিভিন্ন সিডিসির মাধ্যমে পরিচালিত প্রকল্পটি এখন ৪০ কোটি টাকার তহবিলে দাড়িয়েছে। আগামীতে এ প্রকল্পটি টেকসইভাবে বাস্তবায়নে কাউন্সিলরদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

শনিবার দুপুরে নগরভবনের সিটি হল সভাকক্ষে ‘রাজশাহীতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প পরিচিতি বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন অনেকগুলো দিক দিয়ে ব্যতিক্রম। পরিচ্ছন্নতাসহ স্বাস্থ্য শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি এগিয়ে থাকলেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রবাহে এটি খুব বেশি এগুতে পারেনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজশাহীতে সরকারীভাবে চারটি শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হলেও আজ তা বন্ধের পর্যায়ে। শহর কিংবা জেলা শহরে তেমন কোন শিল্পায়ন হয়নি। পূজি বিনিয়োগ করা হয়নি। বিসিক তাঁর কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারেনি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা ছাড়া এখানে তেমন কোন বড় শিল্প গড়ে উঠেনি। ফলে বেকারত্ব এখনও এখানে প্রকট। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে, সেই প্রচেষ্টায় চলছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছে ও প্রচেষ্টায় এমডিজি বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এখন আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছি। এই অবস্থায় নারীদের আর অবহেলিত বলা যাবে না। নারীরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রীও নারী। নারীরা বিমান চালাচ্ছে, পুলিশ হচ্ছে, জেলা প্রশাসক হচ্ছে। নারীরা এখন আর শুধু ঘরের মধ্যে নেই। রাজশাহীতে নারীদের কার্যক্রম অন্যান্য শহরের তুলনায় অনেক বেশি।

রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাওগাতুল আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন এলআইইউপিসি প্রকল্পের সদস্য সচিব ও রাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার। প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম উপস্থাপন করেন এলআইইউপিসি সিটি লিয়াজোঁ সমন্বয়ক ইকবাল হোসেন।

এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন এলআইইউপিসি প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব আব্দুল মান্নান, এলআইইউপিসিপি প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক একরামুল কবীর, রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র ও ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ নিযাম উল আযীম, সচিব আবু হায়াত মোঃ রহমতুল্লাহ।

সভায় রাসিকের কাউন্সিলর, প্রকল্পের কর্মকর্তা, সিডিসির নেতৃবৃন্দসহ রাসিকের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পটি মূলত: পাঁচটি ক্ষেত্রে কাজ করছে যার আওতায় রয়েছে নানা ধরনের উদ্ভাবনী কার্যক্রম: শহরে বসবাসরত দরিদ্রদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা: ভূমির ভোগদখলি নিরাপত্তা বাড়ানো, গৃহঋণ প্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানো ও অর্থায়ন। কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন শক্তিশালী করা: কমিউনিটি পর্যায়ে দরিদ্রদের সংগঠন তৈরি করা, টেকসই সংগঠনের লক্ষ্যে কমিউনিটিভিত্তিক সঞ্চয় ও ঋণ কার্যক্রম গ্রহণ ও জোরদার করা, কমিউনিটি পর্যায়ের দারিদ্রদের সংগঠনগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান: শহরে বসবাসরত দারিদ্রদের দক্ষতা বাড়ানো, কর্মসংস্থান ও ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি, শহরে দরিদ্র বিশেষত গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য পুষ্টি সহায়তা, বাল্যবিবাহ, নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পদক্ষেপ, জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো উন্নয়ন: কমিউনিটিভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়ন, উন্নত ও জলবায়ু সহিষ্ণু পৌর অবকাঠামো উন্নয়ন, দরিদ্রবান্ধব নগর ব্যবস্থাপনা, নীতি ও পরিকল্পনা জোরদার করা: দরিদ্রবান্ধব পৌর ব্যবস্থাপনা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতা বাড়ানো, পৌরকর্তৃপক্ষের দারিদ্রবান্ধব ও জলবায়ু সহিষ্ণু টেকসই নগর পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বারোপ করা, জাতীয় নগর নীতিমালা অনুযায়ী কর্মপহ্না ও জাতীয় নগর নেটওয়ার্ক জোরদার করা।

লিভলিহুডস ইমপ্রুভমেন্ট অব আরবান পুর কমিউনিটিজ (এলআইইউপিসি) প্রজেক্টটি জুলাই গত ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এবং এর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশ সরকার, ডিএফআইডি এবং ইউএনডিপির অর্থায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার নেৃতত্বে কমিউনিটির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।