প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা ও বেঁধে দেওয়া সময়সূচি মেনে রাজশাহীতে গাছ থেকে আম পাড়া শুরু হয়েছে। রোববার (২০ মে) সকাল থেকে তীব্র তাপদাহ থাকায় দুপুরের পর থেকে আম ভাঙা শুরু হয়। প্রথম দিন আজ গাছ থেকে জাত আম খ্যাত গোপালভোগ ও গুটি জাতের আমপাড়া শুরু করেছেন স্থানীয় আম চাষিরা।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, গুটি আম প্রতি বছরই একটু আগে পাকে।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই অনেকেই আজ গুটি আম নামাতে শুরু করেছেন। তবে একই সাথে আগাম জাতের গোপালভোগ পাড়া হচ্ছে।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিনের হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের জনপ্রিয় আমের পরিপক্বতা আসার সময়কালের মধ্যে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে উঠবে গোপালভোগ আম। অত্যন্ত সুস্বাদু, আঁশ বিহীন, আটি ছোট আম। সাইজ মাঝারি, কেজিতে ৫টা থেকে ৬টা ধরবে। এর পর পাকা শুরু হবে ল্যাংড়া আম। তাই রাজশাহীতে জুনের প্রথম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে উঠবে ল্যাংড়া আম।
নাম ল্যাংড়া হলেও এর স্বাদ অসাধারণ। আটি ছোট ও পাতলা, খোসা খুব পাতলা, রসালো, গায়ে শুধুই মাংস। এভাবে পর্যায়ক্রমে রাজশাহীর সব আম নামতে শুরু করবে বলেও জানান রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম আবদুল কাদের বলেন, বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী কেবলমাত্র গাছে পাকলেই আজ থেকে গুটি আম পাড়তে পারবেন চাষিরা। গোপালভোগও ভাঙা যাবে। পর্যায়ক্রমে ১ জুনের আগে হিমসাগর, খিরসাপাত ও লক্ষণভোগ নামানো যাবে না বলেও জানান রাজশাহী জেলা প্রশাসক।
এদিকে, সময় মেনে আম ভাঙার বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য রাজশাহীর নয় উপজেলার নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আমচাষি, ব্যবাসায়ী ও ক্রেতাদের সব সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। এজন্য রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে অস্থায়ী অফিস খোলা হয়েছে।
এছাড়া বানেশ্বরে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের শাখাগুলো শনিবারও খোলা থাকবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিনে আট ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টা সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন। আর আম পরিবহনে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে পুলিশ।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী এবার ল্যাংড়া আম নামানো যাবে ৬ জুন থেকে। এছাড়া চলতি মৌসুমের আমরূপালি ও ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা জাতের আম ১ জুলাইয়ের আগে রাজশাহীর চাষিরা গাছ থেকে ভাঙতে পারবেন না।

এর কারণ রাজশাহীর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আশ্বিনা আম পাকা শুরু করবে আগামী জুন মাসের শেষ সপ্তাহে। তাই এবার চলতি মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রাজশাহীর সুস্বাদু মিষ্টি আমের ভরা মৌসুম চলবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে ৬ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, চাষিরা এখন আমগাছের নিয়মিত পরিচর্যা করেন এবং যত্ন নেন। তাই প্রতি বছরই ভালো ফলন হয়। রাজশাহীতে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। কিন্তু এবার দফায় দফায় কালবৈশাখীতে উৎপাদন কিছুটা কম হবে। তবে এতেও চাহিদা পূরণ হবে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন বলেও জানান ঊর্ধ্বতন এই কৃষি কর্মকর্তা।
স/শ