প্রবাসী কর্মীদের ৩ কোটি টাকার সহায়তা দেবে ব্র্যাক

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির এই সংকটময় সময়ে চাকরি হারিয়ে বা অসহায় হয়ে দেশে ফেরত আসা ৭ হাজার ২৫০ জন প্রবাসী কর্মীকে জরুরি সহায়তা হিসেবে নগদ তিন কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দিচ্ছে ব্র্যাক।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দুপুরে ভার্চুয়াল একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে এবং স্থানীয়ভাবে ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দ্বারা বিদেশফেরত কর্মীদের প্রকৃত অবস্থা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশের মাধ্যমে নগদ এই অর্থ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্র্র্যাক জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এক হাজার ৫৪৫ জন বিদেশফেরত কর্মীর কাছে ৬১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি পাঁচ হাজার ৭০৫ জনের যাচাইবাছাই চলছে। তারাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে জরুরি এই অর্থ-সহায়তা পাবেন।

মূলত ব্র্যাকের নিজস্ব অর্থায়ন, রয়েল ড্যানিশ দূতাবাস, সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি), প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে আইওএম-ব্র্যাকের যৌথভাবে পরিচালিত প্রত্যাশা প্রকল্প, চিলড্রেন ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ফাউন্ডেশন (সিফ) এবং ব্র্যাক ইউকে-এর সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে নগদ এই অর্থ প্রদান করা হচ্ছে।

সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, লিবিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা ফিরেছেন তারা এই সহায়তা পাচ্ছেন। ব্র্যাক জানিয়েছে, শুধু জরুরি সহায়তা নয়, ব্র্যাকের নিজস্ব অর্থায়ন ও দাতাদের সহায়তায় বিদেশ ফেরতের মনোসামাজিক সেবা, দক্ষতা তৈরি, অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণের জন্য আগামী তিন বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিকিল্পিতভাবে খরচের পরিকল্পনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ঢাকার ড্যানিশ দূতাবসের ডেপুটি চিফ অব মিশন রেফিকা হেইতা কোপেনহেগেন থেকে যুক্ত হয়ে বলেন, কোভিড ১৯ এর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশে ফিরতে শুরু করেন। ব্র্যাক তখন জরুরি পরিস্থিতিতে বিদেশ ফেরতদের সহায়তা করার জন্য আমাদের প্রস্তাব দেয়। এমন বিরূপ পরিস্থিতিতেও যে মানবিকভাবে সবার পাশে দাঁড়ানোর কৌশল বের করা যায় সেটি কিন্তু ব্র্যাক করে দেখাল।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর কে এ এম মোর্শেদ। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশ যখনই কোনো দুর্যোগে পতিত হয়েছে, ব্র্যাক সামনের সারিতে থেকে সরকারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বাংলাদেশে আঘাত হানার সাথে সাথে ব্র্যাক সরকারের সঙ্গে সহযোগী হয়ে তা মোকাবিলায় কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশফেরতদের পাশে দাঁড়ানোর এই উদ্যোগ।

মোর্শেদ বলেন, আমরা প্রবাসীদের সহায়তা দিচ্ছি বলবো না। দেশের প্রতি তাদের অবদানের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমাদের পক্ষ থেকে এই ছোট্ট উপহার।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা ও মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান। ব্র্যাকের কোভিড-১৯ এর জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং করোনা পরবর্তী সময়ে বিদেশফেরত কর্মীদের জন্য টেকসই পুনরেকত্রীকরণের জন্য প্রোগ্রামের উদ্যোগগুলোর কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশফেরতদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি তারা বিভিন্ন সংকটে রয়েছেন। অনেকেরই পরিবার চালানোর জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। তবে শুধু ৭২৫০ জন অভিবাসী কর্মীকে নগদ তিন কোটি টাকা আমরা আমাদের কাজ শেষ করতে চাই না। আমরা ইতোমধ্যেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ২ হাজার ৫০০ বিদেশফেরত কর্মী ও তাদের পরিবারকে মনোসামাজিক সহায়তা দিয়েছি। করোনা পরবর্তী সময়ে বিদেশফেরত কর্মীরা কীভাবে স্বচ্ছল হয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য আমাদের আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা মনে করি এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কাজটি শুধু সরকারের একার নয়, সবাইকে মিলে কাজটি করতে হবে।

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের টাঙ্গাইল জেলা রিইন্টিগ্রেশন সেন্টার (ডিআরএসসি) থেকে যুক্ত হয়ে সিঙ্গাপুরফেরত কর্মী রাশেদুল হাসান রুমী বলেন, আমি সিংগাপুরে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। কোম্পানির সাথে আরো ২ বছরের চুক্তি ছিল। কোভিড -১৯ মহামারির কারণে কোম্পানির কাজ কমে আসে। তাই কোম্পানি ছুটি কাটানোর ঘোষণা দিয়ে আমাকে দেশে ফেরত পাঠায়। এখন পুরোপুরি বেকার। প্রায় ৫ লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে। পরিবারের ৪ জন সদস্য আমার আয়ের উপর নির্ভরশীল।

সিরাজগঞ্জ থেকে শওকত হোসেন যুক্ত হয়ে জানান, ২০১৮ সালের এপ্রিলে চার লক্ষ টাকা খরচ করে ব্রুনাই যান। চীনের নাগরিকদের সাথে কাজ করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখন আর্থিক অনটনের মধ্যে আছেন।

নরসিংদীর হোসেন মিয়া জানান, ২০১৭ সালে ৭ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব যান। ২০২০ সালের ৭ মার্চ ছুটিতে দেশে চলে আসতে বাধ্য হন। ২৭ মে ছুটি শেষ হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে যেতে পারছেন না। কোনো আয় না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, অভিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ব্র্যাক সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। করোনার এই সময়েও সবার আগে তারা উদাহরণ তৈরি করলো। আমরাও ভাবছি কী করা যায়। সবাই মিলে প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।