প্রতিবাদ করলে চাকরি থাকে না, বললেন মাঠকর্মীরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পটুয়াখালীর চার উপজেলায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত প্রত্যাশা বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কর্মীদের নিয়মিত বেতন না দেওয়া, বেতন থেকে টাকা কেটে রাখা, যাতায়াত ও মোবাইল ফোনের বিল না দেওয়া, ঘন ঘন বদলি, বাধ্যতামূলক বিমা করা, কথায় কথায় চাকরিচ্যুত করা, অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিল দাখিল করা, কর্মীদের বিস্কুট পরিবহনে বাধ্য করাসহ এ ধরনের বিভিন্ন অভিযোগ এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগের আংশিক সত্যতা স্বীকারও করেছে। কিন্তু এর পরেও অজ্ঞাত কারণে এনজিওটির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে স্কুল ফিডিং প্রকল্পের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ।

জানা গেছে, প্রত্যাশা বাংলাদেশ নামের এনজিওটি বর্তমানে পটুয়াখালী জেলার দশমিনা, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা উপজেলায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এই চার উপজেলায় ১৯ জন মাঠকর্মীসহ মোট ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শুরু থেকে সংস্থাটি কর্মীদের নির্ধারিত বেতন দেয়নি। তারওপরে প্রত্যেকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে শতকরা ১০ টাকা হারে বেতন থেকে কেটে রাখছে। মাস শেষে নিয়মিত বেতন পরিশোধ না করার অনিয়ম সংস্থাটি নিয়মে পরিণত করেছে। গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের অক্টোবর মাসের বেতন আজ পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি। গত ৬ মাস ধরে কর্মীদের যাতায়াত ও মোবাইল ফোনের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে না। মাঠকর্মীদের যখন-তখন যেখানে-সেখানে বদলি করার মাধ্যমে বদলি বাণিজ্য করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলে কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে এবং সেখানে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নতুন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি মাঠকর্মীদের বাধ্যতামূলক বীমা করানোর একটি বিশেষ মিশন নিয়ে মাঠ নেমেছেন সংস্থাটির কর্তৃপক্ষ। কর্মীদের অবিলম্বে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন কর্মী অভিযোগ করেছেন, প্রকল্পই যেখানে অস্থায়ী। সেখানে বাধ্যতামূলক বিমা, স্রেফ একটি বাণিজ্য। সংস্থাটি নিয়মিত প্রচুর ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওয়ার হাউসে পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকলেও নিয়মিত বিল করা হয়। ঠিকাদারের মাধ্যমে স্কুলে বিস্কুট পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও এ কাজে কর্মীদের ব্যবহার করানো হয়। অফিসের বিদ্যুৎ বিল কর্মীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে কর্মীদের বিভিন্ন এলাকায় মিটিং ডাকা হলেও কর্মীদের কোনো ধরনের যাতায়াত ভাতা দেওয়া হয় না। উপরন্তু থাকা-খাওয়ায় কর্মীরা নিজেদের পকেটের টাকা ব্যয় করে। কোন স্কুলেই প্রতি মাসের যথাসময়ে বিস্কুট পৌছে দেয়া হয় না।

‘প্রত্যাশা বাংলাদেশ’ এর মাঠকর্মী রেজাউল হক ও বিধান চন্দ্র অভিযোগ করেন, গত ১২ ডিসেম্বর তারা চার মাসের বকেয়াসহ বেতন ভাতাদি চাইলে ওই দিন রাতেই প্রকল্প সমন্বয়কারী মশিউর রহমান ফোনে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে দেন।

তাদের আরও অভিযোগ, প্রতি মাসে তাদের যথাক্রমে ১৬ হাজার ও ২০ হাজার টাকা বেতন নির্ধারিত থাকলেও ১০ ভাগ টাকা কেটে রাখা হয়েছে। সংস্থাটি দুই ধরনের বেতনের শীট তৈরি করে। এর একটি শীটে সঠিক বেতন লিখে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়। অপরটি এনজিওর কাছে জমা থাকে। কর্মীদের দুটি শীটেই স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করা হয়।

এনজিওর বিভিন্ন স্তরের মোট ১৩ জন কর্মী এ ধরনের আরও বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য জানিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। যার কপি দেওয়া হয়েছে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আর এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রত্যাশা বাংলাদেশের গলাচিপা অফিসের সমন্বয়কারী মশিউর রহমান বলেন, ‘যেসব অভিযোগ ওঠেছে তার মধ্যে ৪০ ভাগ সত্যি। বাকি অভিযোগের সত্যতা নেই। যারা চাকরি করবে না, কেবলমাত্র তাদের চাকরি ছাড়ার কথা বলা হয়েছে।’

বকেয়া বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বছরের জুলাই সেপ্টেম্বর মাসের বেতন দেয়া হয়নি। হেড অফিসে একটু সমস্যা ছিল। কিছু দিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।’