প্রতিদিন ঢাকায় মানুষ বাড়ছে ৯৫৯ জন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: সারা দেশে ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব, ফলে ঢাকামুখী শিক্ষার্থীর ঢল। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নিয়ে তাদের বড় একটি অংশই রাজধানীতে থেকে যাচ্ছে। চাকরি বা কাজের সন্ধানেও অনেকে আসছে। বিয়ের পর স্ত্রীকে এনে অনেকেই সংসার পাতছে ঢাকায়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং গ্রামে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সংঘাতের জেরে জীবন বাঁচাতেও অনেকে আসছে। এভাবে নানা কারণে বসবাসের জন্য সারা দেশ থেকে প্রতিদিন ঢাকায় আসছে ৯৫৯ জন। গত দুই বছরে এ সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৭০ লাখে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএস বলেছে, বিয়ে, চাকরির সন্ধান, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে ২০১৪ ও ২০১৫ এই দুই বছরে দেশের অভ্যন্তরে স্থান বদল হয়েছে দুই কোটি ২১ লাখ মানুষের। এদের মধ্যে ৩১.৫ শতাংশই এসেছে ঢাকায়।

শ্রমশক্তি জরিপের প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নমুনা ভিত্তিতে এক লাখ ২৩ হাজার খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জরিপ করতে গিয়ে দেখেছি, একক কোনো কারণে মানুষ অভিবাসী হয়নি। অভিবাসনের বহুমাত্রিকতা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী এসেছে ঢাকায়। ’

জরিপে দেখা গেছে, গত দুই বছরে যে দুই কোটি ২১ লাখ মানুষ স্থান বদল করেছে, তাদের মধ্যে নারীই বেশি। এ সংখ্যা এক কোটি ৫১ লাখ। বাকি ৭০ হাজার পুরুষ অভিবাসী হয়েছে এক জেলা থেকে আরেক জেলায়। অর্থাৎ এই বিশাল জনগোষ্ঠী দেশের এক জেলা থেকে আরেক জেলায় গিয়ে বসবাস শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে বড় একটি অংশ বলেছে বিয়ে। বিয়ের পর নারীদের নিজ জেলা থেকে আরেক জেলায় স্থায়ীভাবে চলে যেতে হচ্ছে। অনেকে বলেছে, চাকরি কিংবা কর্মসংস্থানের আশায় অভিবাসী হতে হয়েছে। আবার অনেকে জানিয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভিন্ন জেলায় তাদের যেতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)—এ দুটি সংস্থার আলাদা প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ অভিবাসন প্রতিদিনই বাড়ছে। কারণ বিয়ে, চাকরির সন্ধান ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

সর্বোচ্চ ৪২ শতাংশ অভিবাসী জানিয়েছে, বিয়ের কারণে তাদের স্থান বদল করতে হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ২৭ শতাংশ বলেছে অভিবাসনের কারণ পারিবারিক, ২৩ শতাংশ বলেছে কর্মসংস্থানের জন্য। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত দুই বছরে এক লাখ এক হাজার মানুষ অভিবাসী হয়েছে। শিক্ষার কারণে ২ শতাংশ ও বদলির কারণে অভিবাসী হয়েছে ২ শতাংশ।

জানতে চাইলে রামরুর কর্মসূচি পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে আমরা নিজেরাও জরিপ করতে গিয়ে দেখেছি, রংপুর-কুড়িগ্রামের মানুষ কর্মসংস্থানের আশায় চট্টগ্রামে পাড়ি জমিয়েছে। অনেকে ঢাকায় এসে পোশাক কারখানায় কাজ করছে। মূলত কাজের খোঁজে মানুষ নিজ বাসভূমি ছাড়ছে। ’ তিনি বলেন, অভিবাসনের বড় আরেকটি কারণ হলো বিয়ে। চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ নিজের বিভাগেই অন্য জেলায় বিয়ে করছে, তাদের কেউ উত্তরবঙ্গে বিয়ে করতে যাচ্ছে না। এতে করে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে অভিবাসীর পরিবর্তন আসছে। উত্তরবঙ্গেও বিয়ের কারণে এক জেলার মেয়ে আরেক জেলায় চলে যাচ্ছে। অন্যান্য জেলাতেও একই চিত্র।

বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, যে দুই কোটি ২১ লাখ মানুষের অভিবাসন হয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে রাজধানীতে ৩১.৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অভিবাসী গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে আছে খুলনা বিভাগ, ১৭ শতাংশ।

জানতে চাইলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত  জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলা। এ তিন জেলায় গত ২০ বছর ধরে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী। দেশের অন্যান্য জেলায় যেখানে শহর বাড়ছে, খুলনা শহরের পরিধি সেখানে দিন দিন কমছে। পুরুষ প্রথম তার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য জেলায় চলে যায়। পরে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও নিয়ে যায়। তাঁর মতে, অভিবাসন কোনো সমাধান হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে যেতে হবে। তাঁর মতে, মানুষ জীবিকার সন্ধানেই এলাকা ছাড়ে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য কর্তৃপক্ষকে কল্যাণমুখী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাতে মানুষ নিজের এলাকায় অবস্থান করবে।

শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসীর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীই বেশি। এই হার ২৬.৫ শতাংশ। অর্থাৎ গত দুই বছরে যে দুই কোটি মানুষ অভিবাসী হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীর সংখ্যা ৩৭ লাখ। এর পরে আছে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৩০ লাখ দুই হাজার। তৃতীয় অবস্থানে আছে ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ৩০ লাখ। বিবিএস বলছে, নানা কারণে যে দুই কোটি ২১ লাখ মানুষ অভিবাসী হয়েছে, তার মধ্যে এক কোটি ১৫ লাখ কর্মসংস্থানের জন্য জায়গা বদল করেছে। এ হার ৫২ শতাংশ। সূত্র: কালের কণ্ঠ