প্রতিদিন গাড়ি চালান, কিন্তু ১৬ বছর ধরে হর্ন দেন নি কখনও

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: গাড়ি চালান প্রতিদিন, কিন্তু ১৬ বছর ধরে হর্ন দেন না বলেই দাবি কসবার বাসিন্দা তথা পেশায় ড্রাইভার দীপক দাসের!
প্রায় তিন দশক ধরে শহরের রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছেন দীপক। তবলাবাদক পণ্ডিত তন্ময় বসু, শিক্ষাবিদ প্রয়াত অম্লান দত্ত, শিল্পী গোলাম ফকির-সহ অনেকেই তাঁর গাড়ির সওয়ারি। দীপকের দাবি, ২০০১ সাল থেকেই গাড়ি চালানোর সময় হর্ন বাজান না তিনি। এমনকী, নিজের গাড়ি, সাইকেল এবং স্কুটার থেকে খুলে ফেলেছেন বেল এবং হর্ন। শব্দদূষণের বিরুদ্ধেই তাঁর এই প্রতিবাদ।

দীপকের দাবি, যদি গাড়ির গতি এবং অবস্থান সম্পর্কে চালকের সম্যক ধারণা থাকে, তাহলে হর্নের দরকার হয় না। সম্প্রতি দীপকের গাড়িতে চড়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিয়েছে ‘এবেলা’। দেখেছে, সরু গলিতে এবং বাঁকের মুখে গাড়ির গতি মন্থর করে তাঁর সতর্ক চালনা। দীপক বলেন, ‘‘আমি যে কাউকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। তাঁরা আমার গাড়িতে বসুন। যে কোনও জায়গায় যে কোনও পরিস্থিতিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি চালাব। হর্ন দেব না।’’

পণ্ডিত তন্ময় বসু বলেন, ‘‘শহরের বাইরে গেলে দীপকের গাড়িতেই যাই। ও কখনও হর্ন বাজায় না। গাড়ির সামনে আচমকা কেউ চলে এলে অসামান্য দক্ষতায় গাড়ি থামিয়ে দেয়। খুব সতর্কতার সঙ্গে রাস্তার বাঁক অতিক্রম করে। কোনওদিন ওকে অ্যাকসিডেন্ট করতে দেখিনি!’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি এই নিয়ে প্রশ্ন করলে দীপক উত্তর দিয়েছে, হর্নের কী দরকার! পায়ের নীচে ব্রেক রয়েছে তো!’’

কসবার বোসপুকুর এলাকার বাসিন্দা দীপক স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা করার পর ভর্তি হয়েছিলেন আশুতোষ কলেজে। তবে অভাবের তাড়নায় গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা হয়নি। ১৯৯০ সালে ২৪ বছর বয়সে তিনি গাড়ি চালানোর লাইন্সেস পান।
হর্ন না দেওয়ার কথা মাথায় এল কবে থেকে? দীপক বলেন, ‘‘ছোট থেকেই শব্দের তাণ্ডব নিয়ে আমার অস্বস্তি ছিল। জীবনে প্রথম যে সংস্থায় চাকরি করতে ঢুকি, সেখানে বরুণ ভৌমিক নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিই আমাকে জানান, বিশ্বের বহু দেশেই হর্নের তাণ্ডব নেই। তখন থেকেই ধীরে ধীরে হর্ন বাজানো কমিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ করার সাহস পাইনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘২০০১ সালে আমার মেয়ে হয়। বাড়ির পাশ দিয়ে তারস্বরে হর্ন বাজিয়ে গাড়ি যেত। ও ঘুমের মধ্যেই আঁতকে উঠত। এরপর কিছুদিন পরেই আমি হর্ন বাজানো ছেড়ে দিই।’’
দীপক জানান, তাঁর গাড়িতে সবসময় বই থাকে। ২০০১ সালে মেয়ের জন্মের কিছুদিন পরে বিমানবন্দরের কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তিনি জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ছিলেন। আচমকা তারস্বরে হর্ন দিতে দিতে পাশ দিয়ে একটি গাড়ি চলে যায়। এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আর হর্ন বাজাবেন না।

সহ-ড্রাইভারদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে? দীপকের উত্তর, ‘‘বহুবার! কিন্তু কাউকেই স্বপক্ষে আনতে পারিনি।’’