প্রগতিশীল শিক্ষকের কুশপুত্তলিকা দাহ করায় ইবি শিক্ষকদের নিন্দা, জড়িতদের বিচার দাবি

ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে শিবির আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ করার প্রতিবাদে নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।

বুধবার সকাল ১১টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর নিকট নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে এর সাথে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ইবি শাখা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের একটি গ্রুপ ছাত্রলীগের টেন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডায়না চত্বরে জড়ো হয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ করে। তাদের দাবী ড. মাহবুব ছাত্র জীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির মতাদর্শী সংবাদপত্র পাঠক ফোরামের সদস্য ছিলেন।

এসময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা, প্রক্টর অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মন, আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দারসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা এটি খুবই দুঃখজনক বলে দাবি করেন। তারা বলেন, কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমান ছাড়া একজন প্রগতিশীল শিক্ষক সম্পর্কে এমন অভিযোগ তোলা মানে সমস্ত প্রগতিশীল শিক্ষকদের ব্যাথিত করা। যা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন ভাবেই কাম্য নয়। যে পাঠক ফোরামের কথা বলা হয়েছে অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেক-এর মত ব্যাক্তি এ ফোরামের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাহলে কিভাবে এটি শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমান হিসেবে গ্রহণ করা যায়।

বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুধাংশু কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদপত্র পাঠক ফোরামের সদস্য ছিলাম সেজন্য আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি, যেখানে প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক স্যারের মত মানুষ প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন সেখানে এই অরাজনৈতিক সংগঠনকে শিবিরের সংগঠন আখ্যা দেওয়া খুবই দুঃখজনক। এখান থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আমি নিজেকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম।

এসময় উপস্থিত শিক্ষকরা বলেন, এরকম একজন প্রগতিশীল শিক্ষককে অপদস্ত করা খুবই দুঃখজনক, এভাবে শিক্ষক সমাজকে অপমান অপদস্থ করা কখনই মেনে নেয়া যায়না। প্রগতিশীল একটি শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে এরকম মানহানি করায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এসব কাজের মদদদাতা ও আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।

পরে সাধারণ শিক্ষকরা প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সভাপতি ড. রেজওয়ানুল ইসলামের কাছে গিয়ে ফোরামের পক্ষ থেকে এরকম একজন প্রগতিশীল শিক্ষককে শিবির আখ্যা দেয়াকে প্রগতিশীলতা চর্চার বিরুদ্ধে বড় ধরণের আঘাত করার সামিল বলে মনে করেন তারা। ফোরামের পক্ষ থেকে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানায়।

শিক্ষার্থীদের সাথে বলে জানা যায়, প্রক্টর থাকাকালীন সময়ে ২০১৭ সালের ১৪ আগষ্ট অধ্যাপক মাহবুবের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় ক্যাম্পাস থেকে শিবির মুক্ত হয়েছিলো। বিনা রক্তপাতে হলসমূহ শিবিরমুক্ত করে হলগুলোতে হলবডি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু হলে প্রভোস্টের দায়িত্ব নেয়ার পরে ২০০৯ সালে বিভিন্ন মহলের প্রবল বাধার মুখে, ইসলামী ছাত্রশিবির লেখা মুছে হল গেট সম্মুখে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এবং বাংলাদেশের ম্যাপ স্থাপন করেছিলেন তিনি।

সংবাদপত্র পাঠক ফোরামের সদস্য ছিলেন ড. মাহবুবর রহমান আর তখন সেই ফোরামটি নাকি শিবির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো বলে অভিযোগ করেন ইবি শাখা ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা। আর এ সংগঠনটির সাথে তিনি সংযুক্ত থাকায় তাকে শিবির আখ্যায়িত করে তার কুশপুত্তলিক দাহ করেন বিদ্রোহী ছাত্রলীগ।

এবিষয়টি জানতে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পাঠক ফোরাম কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়, এটা সামাজিক সংগঠনের মধ্যে পড়ে। ড. মাহবুবকে আমি আগে থেকে চিনি, তিনি কোন সময়ই শিবির করতেন না। কেউ যদি এটা বলে থাকে তবে তারা অন্যায় করছে। তিনি কখনো জামাত-শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না বরং তিনি আমাদের সাথে মিশতেন।

বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল বলেন, আমি অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে চিনি। আমি সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক ফোরামের সদস্য ছিলাম এবং অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানও এ ফোরামের সদস্য ছিলেন। সে সময় পাঠক ফোরামের সাথে শিবিরের কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলো না, তবে পরবর্তীতে সংগঠনটি শিবির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন ‘পাঠক ফোরাম’ একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে বা কোনো দলের সম্পর্ক নেই। এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এখানে প্রগতিশীল শিক্ষক, বিভিন্ন দলের শিক্ষক বিভিন্ন সময় উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। এখানে উপাচার্য প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এটা লার্নারদের একটি প্লাটফর্ম। এখানে সব ধরণের ছাত্রই অংশগ্রহণ করে থাকে। সংগঠনটি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করে যেখানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর এসে থাকেন। এর আগে জাফর ইকবাল, সুলতানা কামালের মত ব্যাক্তিবর্গও সংগঠনটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। আমার মনে হয় এর সাথে কোনো দলের সংশ্লিষ্টতা নেই।

সাবেক কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুল হক আতিক বলেন, ড. মাহবুবর রহমান কখনো ছাত্রশিবির করে নাই। মাহবুব কখনোই ছাত্রশিবিরের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো না। সে একটা আওয়ামী পরিবারের সন্তান, মুক্ত চিন্তার মানুষ। ছাত্রলীগের যে নেতা ছিলো তাও না, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকীতে তারা অংশগ্রহণ করত। ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমরা তাদের র‌্যালিতে পেয়েছি যখন মুক্তচিন্তার মানুষের বড়ই অভাব ছিলো। ছাত্র শিবির করার কোন প্রশ্নই আসে না। পাঠক ফোরাম করত যারা পড়ালেখা ভালো করতো। পাঠক ফোরামের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক স্যার, তারপরে এখন যিনি গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তিনিও পাঠক ফোরামের সদস্য ছিলেন।

স/অ