প্রক্সি কাণ্ডে জড়িত রাবির সেই ছাত্রলীগ নেতা দল থেকে বহিষ্কার

রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি কান্ডের সাথে জড়িত থাকা সেই ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে নিজ দল থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শৃংখলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় রাবি শাখা ছ্ত্রালীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে বহিষ্কার করা হলো। বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের কোনো নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। তিনি বলেন, আমরা প্রক্সির ঘটনায় তার জড়িত থাকার অভিযোগ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবহিত করি। তারই প্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগের দলীয় নীতির কারণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

গত ২৬ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালেয়ে (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটের (মানবিক) ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে গিয়ে ধরা পড়েন বায়েজিদ খান নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তাকে আটকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে বায়েজিদকে জালিয়াতির সাথে জড়িতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের নাম নেন। এ ঘটনায় তাকে আজ বহিষ্কার করা হয়েছে।

বায়েজিদ ও তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের কারো ছাত্রত্ব নেই বলে জানান ফোকলোর বিভাগের সভাপতি ড. মো. মোস্তফা তারিকুল আহসান। এর মধ্যে তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলে থাকেন। কিন্তু এ ঘটনার পর থেকে তন্ময়কে আর ক্যাম্পাসে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে ফোন দিলে বন্ধ দেখাচ্ছে।

২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ দেশের সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন দেয়। ওই প্রজ্ঞাপনের ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী’ অংশের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় ১৬ নম্বরে তন্ময়ের নাম রয়েছে। ওই সময় তন্ময় ফোকলোর বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং শাহ মখদুম হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। প্রক্সির কাণ্ডে তন্ময়ের নাম আসার পর তার মাদক ব্যবসা নিয়ে ছাত্রলীগের একাংশ মুখ খুলেছেন। তারা জানান, তন্ময় দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। থাকতেন না ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামে কিন্ত রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন। শুধু টাকার গরম দেখাতেন এবং টাকা দিয়ে নেতাকর্মীদের বশে আনতেন।

ওই দিন প্রক্সির দায়ে আরও তিনজনকে একবছরের দণ্ড দেওয়া হয়। তারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের মাস্টার্সের (স্নাতকোত্তর) শিক্ষার্থী এখলাসুর রহমান ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মেহজাবিন এবং খুলনার কাজী মেডিকেল কলেজের প্রভাষক সমীর রায়। আটকের পর তাদেরকে এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালত। বর্তমানে তারা রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। তবে যে সকল ভর্তীচ্ছুর পরিবর্তে প্রক্সি দেওয়া হয়েছে তাদেরকে কোনো শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। কেনো তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়নি এবং প্রক্সি কাণ্ডে উপর মহলের কেউ জড়িত কিনা জানতে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমাদের কাছে তাদের যাবতীয় তথ্য রয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীকে তদন্ত স্বার্থে সরবরাহ করবো। তবে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এদিকে বায়েজিদের প্রক্সির মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘এ’ ইউনিটের (মানবিক) ভর্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় শিফটে প্রথম হয়েছেন তানভীর আহমেদ। ভর্তি জালিয়াতির মাধ্যমে পরীক্ষা দিলেও কীভাবে তার ফলাফল প্রকাশ হলো তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রক্সির মাধ্যমে পরীক্ষা দিলেও কেনো ফল প্রকাশ করা হলো। এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের কেউ জড়িত কিনা তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে ফল প্রকাশ ভুলবশত হয়ে গেছে, বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে অফিসিয়ালি কিছু না জানানোর ফলে এমন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ‘এ’ ইউনিটের সমন্বয়ক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন। এ ঘটনায় পরীক্ষকের দায় দেখছেন ভর্তি উপকমিটির সদস্যরা।

জি/আর