পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সোমবার সকাল সাড়ে নয়টা। শিবগঞ্জ বাজারে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বেশকিছু কর্মমূখী মানুষের ভিড়। তাদেরই একজন রোজবুল হক (৫৫)। চোখ-মুখে অনেকটা হতাশাভরা তাঁর। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কাজের জন্য বের হয়েছি। ‘ঘরে খাবার নাই। কে খাবার দিবে। কোথাও তেমন কাজও নাই।’ আবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললেন, ‘কোনো সরকার-বেসরকারী ও উচ্চ বিত্তরা ত্রাণ দেয়নি। বাড়িতে চাল শেষ। সংসার চালাবো কিভাবে, তাই কাজের খোঁজেই বের হয়েছি।’

শুধু রোজবুলই নয়। তাঁর মতো গোটা চাঁপাইনবাবগঞ্জজুড়ে হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ, যারা দিন আনে দিন খাই, তাঁরা গত আটদিন ধরে চলা লকডাউনে চরম বেকায়দায় পড়েছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। ফলে লকডাউন ভেঙে বাধ্য হয়ে পেটের চাহিদায় বেরেিয় পড়ছেন ঘর ছেড়ে। অনেকেই পায়ে হেঁটে জেলার সীমান্ত পেরিয়ে গোদাগাড়ী, তানোর, সাপাহারসহ সীমান্তবর্তি রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার মধ্যে ঢুকে পড়ে তার পর গাড়িতে চড়ে ছড়িয়ে পড়ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুধুমাত্র রাজশাহীর তানোরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রীদের জন্য সরাসরি বাস যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকায়। যা এর আগে কখনোই ঘটেনি। গত কয়েকদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কর্মমুখী হাজার হাজার মানুষ রাজশাহী শহরে এসেও ভিড় করেছেন। তারা এখান থেকে বাস ট্রাক, ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছেন কাজের সন্ধানে। কারণ লকডাউনের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। তাদের অধিকাংশই অটোরিকশা চালক, ভ্যান চালক, ভুটভুটি চালক বা দিনমজুর।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে শিবগঞ্জ বাজারের চা বিক্রতা নয়নসাহা দোকানের সামনে অনেকটা হতাশা নিয়ে বসে ছিলেন। মাঝে মাঝে আনমনা দোকানের টেবিল-চেয়ারের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছিলেন। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাতদিন ধরে দোকান বন্ধ। পুলিশের ভয়ে দোকানও খুলতে পারি না। কিন্তু এই চায়ের দোকানের কেটলির পানিতেই চলে আমার সংসার। সেই পানি গরম যেমন করতে পারছি না, তেমনি পরিবারের ৫ সদস্য পেটের খাবারও ঠিকমতো দিতে পারছি না। এভাবে আর কতদিন চলব?

শিবগঞ্জের তর্তিপুর পশুর হাট এলাকার রবিউল হক বলেন, প্রথম যখন করোনা এলো, ঘর থেকে বের হতে দিল না, তখন প্রশাসন, পৌর মেয়রসহ নানা লোকজন দফায়-দফায় টাকাসহ চাল, ডাল, তেল, আলু, চিনিসহ অনেক ধরনের পণ্য পেয়েছি। কিন্তু গত সাতদিনে কেউ এসে একবারও খোঁজ নিল না কি খাচ্ছি, বা কেমন আছি, তাহলে আমাদের মতো গরিব মানুষ কিভাবে বাঁচবো।

এদিকে গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি রাস্তায় সাধারণ মানুষের চলাচল অনেকট যেন নির্বিঘ্নে। কেউ পায়ে হেঁটে, আবার কেউ বা অটোরিকশা চড়েও কাজের সন্ধানে বের হয়েছেন।
জানতে চাইলে সোলেমান হোসেন নামের এক যুবক বলেন, ‘বাড়িতে বসে থ্যাকলে কে খাবার দিবে জ্বি? প্যাটে তো খাবার দিতে হবে। কিন্তু বসে থ্যাকে কুণ্ঠে খাবার পাব জ্বি? তাই ব্যার হয়েছি।’

এদিকে গতকাল রাজশাহী স্টেশনে কথা হয় জীবন নামের ২২-২৩ বছরের এক যুবকের সঙ্গে। কিভাবে রাজশাহী আসলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নৌকায় চড়ে পদ্মা নদী হয়ে এসেছি। যাবো ঢাকায়। এলাকায় কোনো কাজ নাই। আমও ভাঙা হচ্ছে না তেমন। খাবো কি? কেউ তো তেমন কোনো খাবারও দেয় না।’
জানা গেছে, জীবনের মতো হাজার হাজার কর্মমূখী মানুষ গত কয়েকদিনে রাজশাহী হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গেছেন কাজের সন্ধানে।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ত্রাণ বিতরণ চলমান রয়েছে। ত্রাণের মধ্যে রয়েছে কেজি চাল, ডাল, আলুমহ বিভিন্ন পণ্য। তবে এ ত্রাণকে খুবই অপ্রতুল বলেছেন অনেকেই। যার কারণে হাজারো মানুষ বিপাকে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে।