পৃথিবীর বুকে এমন ঈদ যেন কখনও না আসে

ঈদুল ফিতর আসন্ন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৪ অথবা ২৫ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানরা এই বিশেষ উৎসবটির জন্য দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পাশাপাশি দিন গণনা করে অপেক্ষা করতে থাকেন।

প্রতিবছর এ উৎসবে শহরের কর্মজীবী কোটি মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে রাস্তায়, বাসে, ট্রেনে এবং লঞ্চে। মহাসড়কে গণপরিবহনগুলো দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে।

ঈদযাত্রার হাজারও পরিশ্রম আর অসহ্য ক্লান্তির পরও মানুষের মনে এক নির্মল শান্তি বিরাজ করে। দীর্ঘ বিরতির পর পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে মুখিয়ে থাকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ঈদের দিন ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু করে গোসল করা, সেমাই-ফিরনিতে মিষ্টিমুখ করা, নতুন পাঞ্জাবি-পাজামা পরে ঈদের নামাজ আদায়, নামাজ শেষে কোলাকুলি, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা-ঘোরাঘুরি, পাড়া-প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেয়া- এসবে যে বাঙালির কত শান্তি আর আনন্দ, তা বলে বোঝানো যাবে না! আর এই অনাবিল শান্তির জন্যই ঈদের আগের এক সপ্তাহজুড়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর থেকে মানুষজন গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন। কিন্তু সেই চিরাচরিত নিয়ম এ বছর ভাঙতে চলেছে! কারণ শেষ সাড়ে ৪ মাসে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে নবাগত এক ভাইরাস!

প্রতিবছরের ঈদ উৎসবের সঙ্গে এ বছরের প্রেক্ষাপট একদমই আলাদা! গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে পৃথিবী অতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করে চলেছে। করোনাভাইরাস নামের অদৃশ্য এ শত্রু এসে পৃথিবীকে নীরব-নিথর করে দিয়েছে।

চীন থেকে আমেরিকা, ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া থেকে ভারত আজ ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে এ রোগের ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’। ইতোমধ্যে দেশে ২৩ হাজারের অধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন; মৃত্যুর সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে দিনে দিনে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। এমন আতঙ্কের সময় আমাদের দরজায় এসে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়েই সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলছে। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত এ ছুটি চলবে। ১৮টি মন্ত্রণালয় সতর্কতার সঙ্গে সীমিত পরিসরে সেবা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

শিল্পকারখানাগুলোকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে ৩-৪ দিন সব সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চিরচারিত নিয়মেই বন্ধ থাকে। আসন্ন ঈদেও সব প্রতিষ্ঠানেই ছুটি থাকবে। কিন্তু কাউকেই কর্মস্থল ত্যাগ করতে দেয়া হবে না বলে সরকারি নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এ জন্য গণপরিবহনও বন্ধ রয়েছে। একটি ক্ষুদ্র ভাইরাস এসে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকেও মাটি করে দিতে চলেছে!

এমনিতেই এ বছর বাঙালির পহেলা বৈশাখ ম্লান করে দিয়েছে করোনাভাইরাস। নতুন করে করোনার বলি হতে চলেছে ঈদুল ফিতরের পবিত্র উৎসব। এ বছর কর্মজীবীদের পরিবার থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে জামাতে ঈদের নামাজ পড়া হবে না। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ-আড্ডা এ বছর হচ্ছে না। করোনাভাইরাস এসে বিশ্ব মুসলিমদের ঐতিহ্য ও ঈদ পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে গেল! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আশঙ্কা আর আতঙ্কের ঈদ এর আগে কখনও এসেছিল বলে আমি শুনিনি।

ইরান, ইরাক, মিসর, সিরিয়া, তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিশ্বের ১৯০ কোটি মানুষের জন্য এবারের ঈদুল ফিতর হতে চলেছে একটি বাজেতম অভিজ্ঞতা। এমন ঈদ যেন আর না আসে! আগামী ঈদুল আজহার আগেই করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসুক, ঈদের বাধাহীন আনন্দ আবার ফিরে আসুক প্রতিটি পরিবারে; এমনটিই প্রত্যাশা আমাদের।

শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

সুত্রঃ যুগান্তর