পুলিশ বলেছে ভারতীয় নাগরিক তবুও পাসপোর্ট দিয়েছে রাজশাহী অফিস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয় আবেদনকারী হাফেজ আহমেদ ভারতীয় নাগরিক। রাজশাহীতে তার বাড়ি নাই। তিনি তথ্য গোপন করে পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। তবে পুলিশের সেই প্রতিবেদনও গোপন করেছিলো রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর তাতেই ভারতীয় নাগরিক হওয়ার পরেও বিপুল অংকের অর্থের লেনদেনের ফলে সন্দেহজনক ব্যক্তি হাফেজ আহমেদের কব্জায় চলে যায় বাংলাদেশী পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট পেয়ে তিনি আর দেরিও করেননি। যে উদ্দেশ্যে তিনি ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন, সেই উদ্দেশ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সৌদি আরবের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ধরে চলে যান সৌদি আরবে।

এমন বড় ধরনের অনিয়ম ও অপরাধের বিষয়টি দুদক তদন্ত করে তার সত্যতা পাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার মামলা করেছে। রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবজাউল আলমসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আবজাউল আলম, ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহমেদ, পাসপোর্ট অফিসের এমএলএস রঞ্জু লাল, অফিস সহায়ক হুমায়ুন কবির, উচ্চমান সহকারী দেলোয়ার হোসেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আলমাস উদ্দিন, রেকর্ড কিপার ইব্রাহিম হোসেন ও মুদ্রাক্ষরিক আব্দুল ওয়াদুদ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৬ জুন মামলার আসামি হাফেজ আহমেদ ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্বেও রাজশাহী নগরীর ছোটবনগ্রাম সপুরা এলাকার বাসিন্দা হিসেবে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের জন্য প্রি-এনরোলমেন্ট (আবেদন) সম্পন্ন করেন। এরপর মামলার দুই নম্বর আসামি রঞ্জু লাল সরকার ওই আবেদনটি অবৈধভাবে নিজ হেফাজতে রাখেন। পাসপোর্টের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে ওই বছরের ১২ জুলাই পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য ৪৩ টি আবেদনপত্রের সাথে হাফেজ আহমেদেরও প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হয় মহানগর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাছে।

  • এরপর ৩১ জুলাই পুলিশের পক্ষ থেকে হাফেজ আহমেদ ভারতীয় নাগরিক বলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয় পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু এই তথ্যটি গোপন করেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে ওই বছরের ১৬ আগস্ট পাসপোর্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদনের জন্য মডিউলে চলে যায়। এরপর একই বছরের ৩০ আগস্ট পাসপোর্টটির চূড়াান্ত অনুমোদন প্রদান করা হয়।

অনুমোদনের পর ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর পাসপোর্টটি গ্রহণ করেন। পাসপোর্ট পেয়ে তিনি বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০০৩৫ ফ্লাইট যোগে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারী হাফেজ আহমেদ সৌদি আরবের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। এরপর তাঁর আর খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে পাসপোর্ট এর আবেদনসহ অন্যান্য সকল কাগজপত্র রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে গায়েব করে দেয়া হয়। এই অপরাধের সঙ্গে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের তৎকালীন ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরস্পর জড়িত ছিলেন।

স/আর