পুলিশের প্রস্তুতিহীনতা গোয়েন্দা ব্যর্থতা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রমজান মাসে হামলা করার ঘোষণা ছিল আগে থেকেই। সর্বশেষ গত শুক্রবার সকালেই টুইটারে বাংলাদেশে কূটনৈতিক পাড়ায় হামলার হুমকি দেওয়া হয়। তবে হামলার এই আগাম তথ্য থেকে গুলশানের সংবেদনশীল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা যায়নি। পরে রাতে রাজধানীর গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করা হয়। এ ঘটনাকে চরম গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেছেন ভুক্তভোগী ও বিশ্লেষকরা। হামলার পর পুলিশ পরিস্থিতি না বুঝেই অপ্রস্তুত অবস্থায় এগিয়ে গেলে দুই কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হন আরো অর্ধশত পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া গুলশানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও ‘গ্রেনেড’ নিয়ে কূটনৈতিক পাড়ায় কিভাবে প্রবেশ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

পুলিশ ও র্যাবের গোয়েন্দারা বলছেন, গুলশানের যে স্থানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে এত বড় ঘটনা ঘটতে পারে তা প্রাথমিকভাবে বুঝতেই পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আগে থেকে ছিল না কোনো সন্দেহ, ছিল না কোনো প্রস্তুতিও।

গুলশানের ২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর রোডে হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেস্টুরেন্টে গত শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে হামলা চালায় কয়েকজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী। তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভেতরে ঢোকে। কিছু সময় পর সেখানে উপস্থিত হয় পুলিশ। তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে নিহত হন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান ও গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুল আহাদসহ অর্ধশত পুলিশ সদস্য আহত হন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘এখানে পুলিশের কোনো ব্যর্থতা নেই। অভিযান চালানো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলাম না। হ্যাঁ, নিরাপত্তার মধ্যে জঙ্গিরা কিভাবে কূটনৈতিক জোনে প্রবেশ করল, তা তদন্ত করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। কারো গাফিলতির প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা যায়, রমজানে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা চালানোর খবর তিন মাস আগেই প্রচার করে একটি চক্র। গত শুক্রবার সকালেও আনসার আল-ইসলামের নামে টুইট বার্তায় হামলার হুমকি প্রচার করা হয়। এরপর রাতে গুলশানে রেস্টুরেন্টে হামলার খবর পেয়ে প্রথমে ছুটে যায় পুলিশ। কিন্তু সন্ত্রাসীদের কাছে আধুনিক অস্ত্র-বোমা থাকার খবর পুলিশ না জানায় বিপদে পড়তে হয়েছে। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই মোকাবিলা করতে যান ডিবির উত্তর বিভাগের মাদকবিরোধী টিমের এসি রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান। জঙ্গিদের ছোড়া ইম্প্রুভাইসড গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে দুজনই নিহত হন। দুই পুলিশ কর্মকর্তা মারা যাওয়ার পর পুলিশের অন্য সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জঙ্গিদের হাত থেকে নিরপরাধ লোকজনকে উদ্ধার করতে র্যাব-পুলিশের সমন্বয়ে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পরে আবার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে আসেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। আইজিপি থেকে শুরু করে অন্যান্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বিশেষ বৈঠক করেন ৭৪ নম্বর রোডের বিজিএমই হাউসে। কিন্তু তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। পরে রাত আড়াইটার দিকে বৈঠক অসম্পূর্ণ রেখে তাঁরা ছুটে যান গণভবনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ নিয়ে পুনরায় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের দিয়ে অভিযান চালানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করার পর আমাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তা ছাড়া পুুলিশ সদস্যদের বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অথচ তারা কোনো ঘটনার সুরাহা করতে পারে না।’

ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘প্রথম থেকেই জিম্মিদের নিরাপদে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। এ কারণেই পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। আমরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখে অভিযান চালিয়েছি।’

এদিকে ডিবির আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার পর কয়েক মিনিট কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। তবে আধাঘণ্টার মধ্যেই বিশেষ টিম সোয়াতকে ডাকা হয়। অভিযানও জোরদার করা হয়। তবে হামলাকারীদের অবস্থান ও প্রস্তুতি বোঝা যাচ্ছিল না।’ তিনি আরো বলেন, অভিযানের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। এখানে এগিয়ে গিয়ে কিছু করার নেই। বিশেষ অভিযানের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত দল লাগে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ