‘পুলিশী অপমানে গণধর্ষণের অভিযোগ তুলতে বাধ্য হই’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ভারতের কেরালা রাজ্যের এক নারী অভিযোগ করেছেন যে গণধর্ষণের তদন্তে পুলিশী হেনস্থার ফলে মূল অভিযোগটাই তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে তিনি ।

 

রাজধানী তিরুবনন্তপুরমে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী জানিয়েছেন যে তদন্তের সময়ে পুলিশ কর্মীরাই তাঁকে অত্যন্ত অপমানজনক প্রশ্ন করেছিলেন। একই সঙ্গে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক চাপ এবং হুমকিও ছিল। তাতেই বাধ্য হয়ে তিনি গণধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

 

পুলিশ অবশ্য বলছে প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ যা পাওয়া গেছে, তা থেকে মনে হয়েছে গণধর্ষণের অভিযোগটাই ভুয়া, যদিও তদন্ত বন্ধ করা হয়নি এখনও।

 

আর ওই নারী এখন পুলিশী হেনস্থার যে নতুন অভিযোগ তুলেছেন, তার পৃথক তদন্ত শুরু হয়েছে।

 

কেরালার পরিচিত অভিনেত্রী ভাগ্যলক্ষ্মী আজ এক দম্পতিকে মুখ ঢাকা অবস্থায় সংবাদ সম্মেলনে হাজির করান।

 

ওই নারী জানান যে এ বছর অগাস্ট মাসে তিনি থ্রিসুর শহরের পুলিশের কাছে চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। যদিও ঘটনাটি দু’বছর আগের বলে জানিয়েছেন ওই নারী।

 

স্বামীর অসুস্থতার কথা বলে ওই চার ব্যক্তি তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে, এমনটাই অভিযোগ করেছিলেন ওই নারী।

 

প্রথমে স্বামীকে তিনি কিছু জানাননি। ঘটনার বেশ কয়েক মাস পরে স্বামীকে ধর্ষণের ঘটনা জানান। কিন্তু তখনও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সাহস হয়নি তাঁদের।

 

অবশেষে দু’বছর পরে, অগাস্ট মাসে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

 

অভিযুক্তদের মধ্যে একজন স্থানীয় কর্পোরেশনের সি পি আই এম দলের কাউন্সিলার।

 

তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছিল। ওই দম্পতি আমার কাছে টাকা ধার করেছিলেন। সেটা ফেরত না দেওয়াতে আমি মামলা করেছি। তখনই ধর্ষণের অভিযোগ করা হচ্ছে।”

ওই নারীর দায়ের করা গণধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন আছে পুলিশেরও।

 

“ঘটনার দু’বছর পরে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তারপরেও সার্কেল ইন্সপেক্টর যে প্রাথমিক তদন্ত করেছেন, তাতে মনে হয়েছে অভিযোগটাই ভুয়া। তবুও আমরা তদন্ত বন্ধ করিনি,” বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন থ্রিসুরের পুলিশ প্রধান জে হিমেন্দ্রনাথ।

 

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী জানিয়েছেন যে তদন্তে নেমে পুলিশ আধিকারিকেরা অত্যন্ত অপমানজনক প্রশ্ন করছিলেন।

 

যেমন একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন চারজন ধর্ষকের মধ্যে কে সবথেকে বেশী আনন্দ দিতে পেরেছে ওই নারীকে!

 

একই সঙ্গে ভয় দেখানোও চলছিল। এমনকি যখন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তিনি বয়ান দিচ্ছিলেন, তখন বাইরে গাড়িতে তাঁর স্বামীকে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল।

 

ওই সময়েই তিনি পুলিশের কাছে দায়ের করা ধর্ষণের অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নিতে চান।

 

থ্রিসুরের পুলিশ প্রধান জে হিমেন্দ্রনাথ বলেছেন, “তদন্তের সময়ে হেনস্থা করার কোনও অভিযোগ ওই নারী আগে জানাননি। বুধবার একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, আর আজতো সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। কিন্তু ওই নারী না আমার কাছে, না শহরের কোনও সিনিয়ার অফিসারের কাছে, না আমার উর্ধ্বতন অফিসারদের কাছে এর আগে এই অভিযোগ করেননি। তবে আমি সঙ্গে সঙ্গেই সহকারী পুলিশ কমিশনারকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছি।”

 

সংবাদ সম্মেলনের পরেই ওই দম্পতি কেরালার মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ মহানির্দেশকের সঙ্গে দেখা করতে যান।

সূত্র: বিবিসি বাংলা